পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8X8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ছিটিয়ে অজস্র পিপড়া জড়ো করে রাখা হতো। তারপর সেই পিপড়ার ভিড়ে সংজ্ঞাহীন দেহকে ফেলে রাখা হতো। সারা রাত বিষাক্ত পিপড়ার তীব্র দংশনে অনেককেই সেই চিলে কোঠায় নির্মভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। এমনিভাবে প্রাথমিক নির্যাতন শেষে অনেককে চোখ বেঁধে লাইনে দাঁড় কারানো হতে তারপর গর্জে উঠতো হিংস্র হয়েনাদের অস্ত্র নিমিষে ভূলুষ্ঠিত হতো অগণিত প্রাণ। আর একটু এগিয়ে গেলাম, দেখলাম একটি পুকুর। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে দুটি আম গাছ এ গাছেও দেখলাম কয়েকটি রশি ঝুলছে আর গাছের নীচে দেখলাম আগাছায় ভরা এক ফালি জমি। জনৈক প্রত্যক্ষদশী জানালেন ঐ সব পেয়ারা-কাঁঠাল গাছের নীচে, এই আম গাছের নীচে, আর ঐ আগাছা ভরা জমিটুকু খুঁড়লেই বের হয়ে পড়বে অসংখ্য ভাই-বোনের অজস্র নর-কঙ্কাল। আর এক প্রত্যক্ষদশী পুকুরের পূর্ব পাড়ে একটি ভরাট গর্তের চিহ্ন দেখিয়ে জানালেন যে, একটি জীবন্ত লোককে হাত-পা বেঁধে এই গর্তে ফেলে দিয়ে মাটিচাপা দিতে তিনি দেখেছেন। তাছাড়া এম, সি, এ আউয়াল সাহেবও এ খবরটি বহু লোকের মুখে শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। তারপর ঢুকলাম কারখানার ভিতরে। সঙ্গী সেকেণ্ড অফিসার সাহেব পূর্বেই শুনেছিলেন যে ইলেট্রিক হিট দিয়ে নাকি এখানে লোক মারা হতো। তাঁর নেতৃত্বে আমরা সে রুমটি খুঁজে পেলাম। দেখলাম একটা সুইচ বোর্ড আর অসংখ্য বৈদ্যুতিক তার। সে ঘরটির পাশেই দেখলাম বেশ কিছু সামরিক ও বেসামরিক লোকের পোশাক। এখানে বাঙ্গালী সামরিক ও বেসামরিক লোকদের উলঙ্গ করে ইলেট্রিক হিট দিয়ে মারা হতো। সারাটা কারখানা ঘুরে দেখলাম। সর্বত্রই দেখা যায়, ইতস্তুত: বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে অনেক কাগজপত্র খানসেনাদের ব্যক্তিগত চিঠি ও পারিবারিক ফটো। লাকসাম রেলওয়ে হাসপাতালে মালী মণিন্দ্র চন্দ্র, উপেন্দ্র চন্দ্র ও শ্রীরাম প্রত্যক্ষদশী হয়ে তারা আমাকে জানিয়েছেন যে, এখানে অনুষ্ঠিত অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ দেখে সে ভীত হয়ে অনেকবারই পালাতে চেয়েছিল কিন্তু সুযোগ মেলেনি। মণিন্দ্র চন্দ্র আরো জানিয়েছেন যে, প্রায় রাতেই দলে দলে লোকদের চোখ বেঁধে জংশনের দক্ষিণের গর্ত করা হতো রাত্রির বেলায় তাদেরকেই সেই গর্তে মাটিচাপা দেওয়া হতো। মণীন্দ্র চন্দ্রের ও তার সঙ্গীদের নির্দেশিত গর্তগুলি খুঁড়লে আজও অসংখ্য প্রমাণ মিলবে বলে তারা জোর দাবী জানান। লাকসামের প্রখাত ডাক্তার জনাব মকবুল আহমদ, মিল মালিক জনাব আব্দুর রহিম ও আব্দুল মমিন এক সাক্ষাৎকারে জানালেন যে, পাক সেনাদের কুখ্যাত মেজর মুজাফফর হাসান গার্দিজি, ক্যাপ্টেন ওবায়দুর রহমান, সুবেদার মুস্তফা খান ও রেলওয়ে পুলিশ বাকাওয়ালীর নেতৃত্বে এবং স্থানীয় কতিপয় দালালদের যোগসাজশে লাকসামে সহস্রাধিক লোকের প্রাণনাশ ঘটে। লাকসাম থানার প্রখ্যাত আওয়ামী লীগ কর্মী ২৪ নং আদ্রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আলী আশরাফকে এবং লাকসামের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক ও খসরুকে এই হত্যাপুরীতে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়।