পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Ꮌ☾ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ চাঁদপুরে আট মাসের বিভীষিকা দৈনিক বাংলা ৭ পেক্রয়ারী, ১৯৭২ চাঁদপুরে ৮ মাসের বিভীষিকা জ্যান্ত মানুষগুলোকে হাত-পা বেঁধে গায়ে সিগারেটের আগুন দেওয়া হতো--- কখনও বা নদীতে ফেলা হতো--- চোখ তুলে চাঁদপুর, ২রা ফেব্রুয়ারী-চাঁদপুরবাসী দীর্ঘ ৮ মাসের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা আজও ভুলতে পরেনি নরঘাতক পিশাচ পাঞ্জাবী মেজর তৈমুর ও তার দোসর সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের শওকতের অত্যাচারের কথা। তাদের বীভৎস নারকীয় তাণ্ডবে বহু মা সন্তানকে হারিয়েছে। বিধবা হয়েছে বহু নারী, ধর্ষিতা হয়েছে কয়েকশ’ অবলা। কচি খুকীটিও এদের বিলাস লালসার কামনা থেকে বাঁচতে পারেনি। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। মুক্তিবাহিনী, ভারতীয় দালাল ইত্যাদি আখ্যায়িত করে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের প্রাণ নিয়েছে। মানুষকে এরা পিটিয়ে মারত। ইট ও পাথর ছুড়ে হত্যা করত। হাত-পা বেঁধে জ্যান্ত মানুষগুলোকে নদীতে ছুড়ে ফেলত। চোখ উঠিয়ে নিত। দাঁত বেঙ্গে দিত। মাথা নিচু করে পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখত। নরপশু এই মেজর শওকত মানুষ হত্যার সময় উল্লাসে মেতে উঠত। হত্যাটা ছিল তার কাছে আনন্দদায়ক। এই ঘৃণ্য চরিত্রহীন শয়তানের একান্ত প্রিয় ছিল নারী ও সুরা। নারীদের দেখলে সে পাগলা কুকুরের ন্যায় ঝাঁপিয়ে পড়তো। সে মুক্তিবাহিনীর সহায়ক ও আওয়ামী লীগের সমর্থক এ ছাড়া অগ্নিদগ্ধ দোকানপাট ও ঘরবাড়ীগুলো জঙ্গী শাহীর মেজর মাসুদের কীর্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই হলো লুটেরাদের নায়ক। তার নির্দেশেই লুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রখাত বাণিজ্য কেন্দ্র পুরান রাজাদের লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পদ। ৭১-এর ৭ ই এপ্রিল থেকে শুরু হয় চাঁদপুরে জল্লাদ বাহিনীর নরমেধযজ্ঞ। সেদিন সকাল ৯ টা ৪৫ মিনিটে দুইটি রঙের স্যাবর জেট চাঁদপুরবাসীকে আতংকিত করে তোলে। শুরু হয় এক টানা ৪০ মিনিট গুলীবর্ষণ। নিমেষের মধ্যে আকাশ ছেচে যায় ধোঁয়ায়। চারিদিকে ধ্বনিত হয় হতভাগ্যের আর্তচীৎকার। হতাহত হয় প্রায় ৫০০ লোক। আর তারই সাথে ছুটে চলে নিরীহ মানুষের কাফেলা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। এর পরদিন সন্ধ্যায় মেজর ইফতেখারের নেতৃত্বে ৫০০ সৈন্য ও অস্ত্র বোঝাই ৭৮টি ছোট বড় সামরিক অসামরিক যান চাঁদপুরে প্রবেশ করে। কুমিল্লা থেকে চাঁদপুরে আসার পথে রাস্তার দু’ধারে তারা নির্বিবাদে গুলি চালায়। চাঁদপুর এসে টেকনিক্যাল স্কুলে আস্তানা গাড়ে। আসার অব্যবহিত পর এক বৃদ্ধা গরু নিয়ে বাড়ী ফেরার পথে গরুটি ছিনিয়ে রাখে এবং বৃদ্ধাকে গুলী করে হত্যা করে। এদিকে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তাদের আস্তানাটি ঘিরে ফেলে গুলী ছুড়তে থাকে। তখন দখলদার বাহিনী মর্টার ও কামান থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করে। রাত্রি প্রভাতেই তারা বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। পুড়িয়ে দেয় পার্শ্বস্থ গ্রামের কুড়ি-পঁচিশটি বাড়ী। এরপরেই ছুটে যায় শহরের অভ্যন্তরে। কয়েক ঘন্টা