পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Ջo বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ দিনাজপুর হত্যা ও লুণ্ঠন দৈনিক বাংলা ৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ দিনাজপুর নির্যাতিত রিক্ত নি:স্ব সর্বস্বান্ত নরহত্যা লুণ্ঠন ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ সর্বত্র একই কাহিনী। আমিনুল ইসলাম প্রেরিত ॥ দিনাজপুর: বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার ধানের দেশ দিনাজপুর। কাটারিভোগের দেশ দিনাজপুর। যার দক্ষিণ-পূর্বে পলির সমতট, উত্তর-পশ্চিমে শাল বন, কাশ ঝোপ জঙ্গল লতার লাল খিরার মাটির মালভূমি। করতোয়া, মহানন্দা, কাঞ্চন পুনর্ভবা, টাউন নদীর স্বচ্ছ সলিলে সতত অবগাহমান দিনাজপুর। কাঞ্চন পুনর্ভবার তীরে তীরে একদিন ছিল সকল অনাড়ম্বর মাটির মানুষ সাঁওতালদের অধিবাস। ঘরে ঘরে চোলাই করা ধেনো মদের নেশায় মতোয়ারা আবালবৃদ্ধবণিতার আনন্দে মুখর থাকতো এই জনপদ। খোলা মৃদঙ্গের তালে তালে ঝুমুর নৃত্যরতা বিশ্ব কর্মীর নিজ হাতে গড়া খোদাই করা কালো সাঁওতাল বালাদের পায়ের ওঠানামা। বলিষ্ঠ দেহবল্লরীর ভাঁজে ভাঁজে রেখায় রেখায় জাগতো স্পন্দন। এখন নেই। না নেই। ঘর নেই। ভিটি নেই। ধান নেই। সে মন নেই। রংপুর থেকে সৈয়দপুর। সৈয়দপুর থেকে দিনাজপুর ৪৫মাইল। আবার দিনাজপুর থেকে ঠাকুরগাঁ ৩৬ মাইল। সৈয়দপুর শহরের বড় বড় পাটের গদীগুলো গুদাম ঘরগুলো শূন্য, খাঁ খাঁ করছে। রেল লাইন পেরিয়ে শহরের পশ্চিম প্রান্তে কাঁচা বাড়তো নেইই-অধিকাংশ পাকা পেস্তা ইটের বাড়ীগুলো ভূশয্যা গহণ করেছে। দিনাজপুর পর্যন্ত পথের দু’ধারে শত শত বাড়ী জুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। শূন্য ভিটিতে একটা-দুটাে করে মানুষ ফিরে এসেছে। আরো ফিরছে। দিনাজপুর শহরের পাঁচ, ছয় মাইলের মধ্যে ধ্বংসটা আরো ব্যাপক। নেই, কিছুই নেই। মানুষের বসতি ছিল তার চিহ্ন মাত্র নেই। নেই পাখ-পাখালীর কিচির-মিচির। তারাও যেন কোথায় শরনার্থী। হিলি থেকে তেতুলিয়া, দুশ মাইলের বেশী সীমান্ত এলাকার অভ্যন্তরে সাত মাইল পর্যন্ত কোন জনবসতি নেই। কমপক্ষে তিন লাখ পরিবার হয়েছে ছিন্নমূল সর্বহারা। তাদের অতীত ছিল। ওরা মাঠে মাঠে বীজ বুনতো। পাকা ধান ঘরে তুলতো। হাসতো গাইতো। পালা পার্বণে ঈদে পূজায় আনন্দ করতো। নেই-নেই। কিছু মানুষ নিজ দেশে পরবাসী। বাংলাদেশের সর্ব উত্তরে প্রান্তরে এই জেলাটাই বোধ হয় খান সেনাদের জবর-দখল আমলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিনাজপুর জেলার ডেপুটি কমিশনার বললেন, আপনি যদি দিনাজপুর জেলার সীমান্ত এলাকায় যান, তাহলে আপনার মনে হবে আপনি আফ্রিকার সাহারার কোন এলাকায় গিয়েছেন। এ জেলার পচাগড় থানা এলাকায়, অমর খানায় প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে। আর সে লড়াই ছিল বেশ দীর্ঘস্থায়ী। দিনাজপুর থেকে ঠাকুরগাঁ যেতে সড়কের ডান ধারে রয়েছে ছোট ছোট শাল গাছের বন। সারাটি পথ বরাবর বনের মাঝ মাঝে বাংকার। হত্যা আর নারী ধর্ষণ, লুন্টন, আর ঘর জালানী। যেখানেই যাই, সেখানেই একই কথা। সব খোয়ানো মানুষগুলোর একই বিলাপ। অভিন্ন কাহিনী । দিনাজপুর শহরে খুব কম বাড়ী আছে যা লষ্ঠিত হয়নি। অসংখ্য ঘরবাড়ী মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। পার্বতীপুরে খান সেনা ও তাদের দালালেরা ইঞ্জিনের বয়লারে জ্যান্ত মানুষকে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ওরা রাতের বেলা রেষ্ট হাউসে মেয়েদের নিয়ে আসতো। চালাতো পাশবিক অত্যাচার। গ্রামের ঘরে ঘরে ঢুকে