পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8&○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড মোট ৫০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। স্বামীজীর বয়স প্রায় ৭০ বছর হয়েছিল। তাকে রমনার মাঠে অন্যান্যদের সাথে লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়েছে ২৮ শে মার্চে। তার স্ত্রী এবং তিন বছরের শিশু সন্তান ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। পিতার মৃত্যুর দিন-পাৰ্বতীর জন্মদিন। কালীড়ীতেই আশ্রিত ছিল সুরুজভল্লী। সুরুজভল্লী সেদিন ২৭শে মার্চের রাতে অনেকের সাথে সারিতে দাঁড়িয়েও মনে করেছিল তার স্ত্রীর প্রসব বেদনার কথা- নবজাত পার্বতীর পিতা আর নেই আছে রমনার কালীবাড়ীতে পিতার জমাট বাঁধা রক্ত। কালীবাড়ীর এক বৃদ্ধা নাম প্রিয়বালা ঘোষ। বয়স ৬০ বছরের মত। দুই গণ্ড বেয়ে ঝরছিল শুধু অশ্রুর ফোঁটা। আমার কাছে আসতে পারেনি ভিড় ঠেলে। তাই অনেক পরে সাবার শেষে আমি তার নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম” আপনি এমন করে কাঁদছেন কেন?” উত্তরে হতবাক। কিছুই প্রথমে বলতে পারেনি। তখন চোখের পানি যেন বাঁধ ভাংগা স্রোতের মত বইছিল। বৃদ্ধার পাশেই দাঁড়িয়েছিল একটি ফুটফুটে রক্ত গোলাপের মত শিশুকে কোলে নিয়ে তার পুত্রবধূ লক্ষীরাণী ঘোষ। কেউ কিছু বলছে না। আমার দ্বিতীয় প্রশ্নে ৫ বছরের শিশু মন্টুচন্দ্র ঘোষ আমাকে উত্তর দিল-” আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে সে জন্য ঠাকুর মা কানছে।” আঁচলে চোখ মুছে বৃদ্ধা প্রীয়বালা তখন ছেলে বউ আর পাঁচটি শিশু সন্তানকে দেখিয়ে আমাকে বলল, সবাইকে ভাসিয়ে আমার মানিক (ছেলে সন্তোষ ঘোষ) গুলীখেয়ে মারা গেছে। দু’টি নাতনী মঞ্জ, সঞ্জও মারা গেছে। বৃদ্ধা এর বেশী আমাকে আর কিছুই বলতে পারেনি। শিশুর মত কেদে উঠেছিল সেদিন রমনার মাঠে দাঁড়িয়ে। পুত্রহারা জননীর কান্নায় আমিও আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারিনি।