পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Ջ8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড কে ক’টা হত্যা করলো তার ওপর নির্ভর করতো iানক বাংলা ১০ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ কে কটা হত্যা করল তার উপর নির্ভর আমিনুল ইসলাম প্রেরিত ॥ গাইবান্ধ: একদিকটা প্রায় ৬ ফুট সমান দেয়ালে ঘেরা। খোলা ফটক। ঢুকতে এক ঝলক দমকা বাসাত রাজ্যের ধুলো উড়িয়ে নিয়ে চোখে মুখে এসে পড়ল। না বাতাস নয় যেনো এক সাথে অনেকগুলো মাংসহীন কংকালের দীর্ঘশ্বাস। এই সে স্থান-যা এক ক্রীড়ারসিক সিভিলিয়ান বৈকালীক বিহার, শরীর চর্চা ও খেলাধুলার জন্য নির্মাণ করেছিলেন। যদিও তিনি জানতেন না যে ভবিষ্যত এক দিন সেখানে নরমুণ্ডের গেভুয়া খেলা হবে। হবে মানুষ মারার নৃশংস খেলা। কোনো কংকাল? হাত-পায়ের অস্থি? চোয়ালের হাড়? মাথার খুলি কিংবা ঠুলি? না কিছুই পাইনি। অত কাঁচা কাজ তারা করেনি। সব পুঁতে ফেলেছে, খুঁড়লে পাওয়া যাবে। দশ, বিশ, তিরিশ, শ, দুশ, তিনশ? কত জানি না । গাইবান্ধার হেলাল পার্ক এর কথা বলছি। এস, ডিও-র অনুপস্থিতিতে তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত অফিসার জনাব আজিজুল হক আমার প্রশ্নের জবাবে বললেন, সেখানে কত লোকের প্রান হনণ করা হয়েছে তা তিনি বলতে পারবেন না। জনাব হক বললেন একদিন মেজর ডেকেছেন। একটু দূরে পাশের রুমে বসে আছি। একজন সুবেদার মেজরের ঘরে ঢুকলো। মেজর প্রমাণ করলো কিতনা। সুবেদারের জবাব তেরা। মেজর সব মিলকরকে আবতক কিতনা। সুবেদার, তিনশ চুরানব্বই অর্থাৎ খুব কম করে হলেও পাঁচশ লোককে সেখানে হত্যা করা হয়েছে। জনাব হক আরো বললেন, আলাপের ধরন-ধারন দেখে মনে হলো কে কত লোককে হত্যা করতে পারলো তার উপরই নির্ভর করতো ওদের পদোন্নতি। ১৮ এপ্রিল গাইবান্ধা শহর থেকে সাইকেলে চড়ে ফিরছেন বাদিয়াখালির খোকা মিয়া । হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখেন দুটো ছেলে একপাল ছাগল নিয়ে প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে। পেছনে তাকিয়েই দেখলেন দুটো জীপ। রাস্তার পার্শে একটি বাড়ীতে ঢুকে পড়লেন তিনি। শুধু কয়েকটি মুরগীর বাচ্চা ছাড়া বাড়ীতে জনমানবের কোন চিহ্ন নেই। পাটকাঠির বেড়ার আড়ালে শুয়ে পড়লেন। ঠিক বাড়ীর সামনেই জীপ দুখানি থামলো। খানসেনারা পেছনের দিকে হাত বাঁধা সাদা কাপড় পরা তিনজনকে জীপ থেকে নামালো। দুজন যুবক। একজনের বয়স কত তা লক্ষ্য করেননি। ওরা যুবক দুটিকে মুখ ফিরিয়ে ওদের দিকে পিঠ ফিরিয়ে দাঁড় করালো। তারপর কোমরে লাথি মারলো। লাথির ধাক্কায় দুজনে দৌড় দিতে শুরু করলো। আমনি প্রথমজনকে গুলীকরলো। হঠাৎ একটা লাফ দিয়ে সে পড়ে গেল। আর উঠল না। দ্বিতীয়জন যেই ফিরে তাকিয়েছে আমনি তাকেও গুলী করলো। একটা আলের পাশে সে এলিয়ে পড়লো। ততক্ষণে ওরা চলে গেছে। দেখে শনে বের হলাম। আমার মতই কোথাও লুকিয়ে থাকা আর একটি ছেলে বেরিয়ে এলো। আলের আশে রক্ষিত গুলী খাওয়া যুবকের কাছে গেলাম। পানি দিলাম। ঢোক গিললো কিন্তু পরক্ষণেই গলগল করে তারা লাল রক্ত বমি করলো।