পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○〉 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড বেতার কেন্দ্রের সামনে দাঁড় করিয়ে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দ্বারা তারা ব্রাস’ মারতো, রক্তাপুত দেহে লুটিয়ে পড়তো হতভাগ্যরা। হত্যার আগে ট্রাক ভরে যখন তাদের নিয়ে যাওয়া হতো তখন সেই সব নিরুপায় মানুষের আর্তনাদ রাস্তার আশপাশের সবাই শুনতো। কিন্তু তাদের তো বাড়ীর বাইরে যাওয়ার উপায় নেই কারফিউ রয়েছে। সেই আর্তনাদ সহ্য করতে না পেরে শেরে বাংলা রেডের এক ব্যক্তি জানালা খুলে মুখ বাড়িয়েছিল মাত্র। ব্যাস, অমনি তাকে লক্ষ্য করে হানাদার বাহিনী গুলি ছুড়লো আর বুলেট বিদ্ধ হয়ে সে লুটিয়ে পড়লো। হানাদার বাহিনী প্রতিরাতে কম করেও শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করতো। দিনের বেলায় তাদের লাশ জোয়ারের পানিতে ভেসে আসতো। কিন্তু কারও সাহস হতো না তাদের দাফন করার। অনেকে তাদের আপনজনের লাশকে সনাক্ত করলেও সেখান থেকে তাকে উঠিয়ে নিতে পারেনি। কেননা বর্বরেরা জানতে পারলে তাকেও হত্যা করবে। কিছুদিন জল্লাদরা ঠিক করলো গুলি করে আর হত্যা নয়। অন্য পন্থা। এবার থেকে শুরু হলো জবাই, কিন্তু সংখ্যায় কমলো না-সেই শতাধিক প্রতিরাতে। এরপরের ঘটনা চরম নিষ্ঠুরতার । রাত্রের বদলে হত্যার জন্য দিনের বেলাকে বেছে নিল। সকলের চোখের সামনে দিনে পিঠ মোড়া দেওয়া ট্রাক ভর্তি বাঙ্গালী নিয়ে যাওয়া হতো আর ঘন্টাখানেক পর শূন্য ট্রাক ফিরে আসতো-গল্লামারীতে পড়ে রইতো কিছুক্ষণ আগের যাওয়া সেইসব মানুষের শীতল দেহগুলে। খুলনা শহর মুক্ত হওয়ার পর গল্লামারী খাল থেকে দুই ট্রাক মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। ছবি তুলবার জন্য গল্লামারীর অভ্যন্তরের ধানক্ষেতে ঢুকে দেখলাম এক নৃশংস দৃশ্য। একাধিক লাশ পড়ে আছে, সেদিকে একটি কুকুর খাচ্ছে আর দূর অপর একটি লাশের পাশে আর একটি কুকুর বসে হাঁপাচ্ছে। মনে হয় মানুষ খেয়ে তার উদর অতিমাত্রায় পরিপূর্ণ। ভাবতেও অবাক লাগে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব বলে খ্যাত মানুষকে কুকুরে টেনে ছিড়ে খাচ্ছে।