পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৩২ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ চট্টগ্রামে বধ্যভূমির সন্ধান পূর্বদেশ ১৩ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ চট্টগ্রামের ২০টি বধ্যভূততে বাঙ্গালী নিধনযজ্ঞ চলেছে পূর্বদেশ প্রতিনিধি ॥ চট্টগ্রাম, ১২ই ফেব্রুয়ারী। -চট্টগ্রাম শহর ও শহরতলী এলাকা সমেত জেলার আরো ৯টি থানাতে হানাদার খান সেনারা সর্বমোট ২০টি বধ্যভূমিতে বাঙ্গালী নিধনযজ্ঞ অনুষ্ঠান চালিয়েছে। শহর ও শহরতলী এলাকার ১০টি বধ্যভূমির মধ্যে আটটিতে গড়ে পাঁচ হাজার করে বাঙ্গালীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অনুমিত হচ্ছে। এ ছাড়া পোর্ট এলাকা এবং নেভীব্যারাক এলাকাতে সুদীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী মানুষকে হত্যা করে কি হারে কর্ণফুলি নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে, তার কোন হদিসও খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম শহর ও শহরতলী এলাকার ১০টি এবং গ্রাম অঞ্চলের গোটা পাঁচেক বধ্যভূমি ইতিমধ্যে আমি ঘুরে দেখেছি। এসব বধ্যভূমি বাঙ্গালী হত্যার সঠিক সংখ্যা হয়তো পাওয়া যাবে না, কিন্তু এখনো সরকার যদি ব্যাপক অনুসন্ধান ও তথ্য সংগ্রহের জন্য এগিয়ে আসেন তবে হত্যাযজ্ঞের ব্যাপকতাসহ একটা আনুমানিক ংখ্যাও নির্ণয় করতে পারবেন বলে বিশ্বাস। কোন কোন মহল চট্টগ্রামে নিহত লোকের সংখ্যা ১ লাখ হবে বলে অনুমান করছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, বিভিন্ন থানাসহ এ সংখ্যা অন্তত: তিন লাখে দড়াবে । শহর ও শহরতলীর আম বাগান, ওয়ারলেস কলোনী, শেরশাহ কলোনী ও ফয়েজ লেকসহ গোটা পাহাড়তলী এলাকাতে এখনো ২০ থেকে ২৫ হাজার বাঙ্গালীর মাথার খুলি পাওয়া যাবে। এছাড়াও রয়েছে চাঁদগাও, লালখান বাজার, হালিশহর, কালুরঘাট, ও পোর্ট কলোনী ইত্যাদি বধ্যভূমি। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ও সার্কিট হাউসেও হাজার হাজার লোককে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে মিরেশ্বরাই ও সীতাকুণ্ডের পাহাড়, রাউজান, পটিয়া, সাতকানিয়া এবং বাঁশখালীর বনাঞ্চলেও হাজার হাজার বাঙ্গালীকে হত্যা করা হয়েছে। বেসরকারী উদ্যোগে সমস্ত এলাকায় রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। বিভিন্ন বধ্যভূমিতে আজো বহু নরকংকাল ইতস্তত: বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। শহরের ওয়ারলেস কলোনী ঝাউতলা ও নাছিরাবাদের পাহাড়ী এলাকাগুলোতে লুকায়িত বহু নরকংকালের অস্তিত্ব আজো পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ঝাউতলা এলাকার বিভিন্ন সেপটিক ট্যাঙ্ক, পাহাড়ী ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে অনেকগুলো কংকাল দেখতে পেয়েছি। সীতাকুণ্ডের শিবনাথ পাহাড়ে কয়েক হাজার বাঙ্গালীকে হত্যা করা হয়েছে। মিরেশ্বরাইয়ের জোরারগঞ্জ এবং ওয়ারলেস এলাকাতে মানুষ জবেহ করার স্থায়ীকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। রাস্তার ট্রাক, বাস এবং ট্রেন থেকে হাজার হাজার লোককে ধরে এনে আটক করে রাখা হতো এবং প্রতিদনি ৫০ জন অথবা ১০০ জন করে হত্যা করা হতো। এ সমস্ত এলাকাতে অসংখ্য কবর আজো দেখতে পাওয়া যায়। মানুষের পরিহিত কাপড়-চোপড়, জুতা, স্যাণ্ডেল ইত্যাদি এখানে সেখানে পড়ে আছে। স্থানীয় জনসাধারণের ধারনা মতে শুধু মিরেশ্বরাই ও সীতাকুণ্ডের বধ্যভূমিগুলোতে ১৫ থেকে ২৫ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া রাউজান, পটিয়া ও বাঁশখালী ইত্যাদি থানাতেও প্রায় অনুরুপহারে গণহত্যা চালানো হয়েছে।