পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড পালাতে সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। এবং ঝুঁকি নিয়ে সপরিবারে নৌকা করে সরে পড়তে সক্ষম হন। পরে তিনি বাসায় পৌঁছে হতাশ হয়। সেই মানবতার শক্র হয়েনাগুলো অনেক বুদ্ধিজীবীকে তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে ধরে এনে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ম্যালেরিয়া উচ্ছেদ বিভাগের এসিষ্ট্যান্ট ম্যালেরিয়া সুপারিনটেনডেন্ট জনাব জোয়রদার মতিউর রহমান, ষ্টোরকিপার জনাব মাকসুদুর রহমান, মেকানিক জনাব কবীর আহমদ, ম্যালেরিয়া ইন্সপেক্টর জনাব সফিউদ্দীন আহমেদ, ও দু’জন সুপারভাইজার বজলুর রহমান ও ইদ্রিস মিয়া। কৃষি বিভাগের একজন প্রোজেক্ট অফিসার জনাব ফয়েজ আহমেদও আল-বদর বাহিনী কর্তৃক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ওয়াপদার দু'জন মেকানিক ছিলেন, তারা হচ্ছেন নাজিমুদ্দীন ও মাহফুজুল হক। দখলদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী এদেশের জারজ সন্তানগুলো নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায় তার চাক্ষুস সাক্ষী রেলওয়ে হাসপাতালের সেনিটারী এসিষ্ট্যেন্ট জনাব ফজলুল বারী। এপ্রিল মাসে চাঁদপুর দখলদার বাহিনীর কবলে পতিত হওয়ার পরও তিনি হাসপাতালের কাজে নিযুক্ত থাকায় বর্বর বাহিনীর নৃশংসতার সাক্ষী হয়ে আছেন তিনি এবং তার ডোম বাহিনীর অনেকেই রেলষ্টেশনের অফিস সমূহে রেষ্টহাউসে দখলদার ও রাজাকার বাহিনীর ক্যাম্প করা হয়। শান্তি বাহিনীর সহযোগিতায় এই সমস্ত নরপশু চাঁদপুর পুরান বাজার ও পাশ্ববর্তী এলাকা সমূহে হত্যা, লুট, নারী নির্যাতন, ও অগ্নিসংয়োগে এক নারকীয় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। নির্বিচারে গণহত্যা ও বহু নারীর সতিত্ব নষ্ট করার বিবৃতি দান করেন জনাব ফজলুল বারী। রেল, লঞ্চ,রাস্তা-ঘাট, নৌকা সমূহ ও বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে হানা দিয়ে নিরীহ নিরপরাধ বাঙ্গালীদের ধরে এনে তাদের ক্যাম্প সংলগ্ন নির্যাতনকক্ষে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। একটি আম গাছ নির্দেশ করে তিনি বল্লেন এই আম গাছটি হাজারো নরহত্যার নীরব দর্শক। আম গাছটির নীচে ফিশিং কর্পোরেশনের গুদামের পিছনেই দুর্ভাগাদের হত্যা করে ২০-২৫ জনকে একই তারে গ্রথিত করে নদীতে ফেলে দিত। যেদিন মৃত্যুর সংখ্যা বেশী হত সেদিন ডোমদের তলব করা হতো। দুজন ডোমের বর্ণনা রেলের ডোম ছুনুয়া ও গয়া প্রসাদ এই সংবাদাতাকে বলে যে, গভীর রাত্রে এসে পাকবাহিনীর লোক তাদের কোয়ার্টার থেকে ধরে নিয়ে যেত। ষ্টেশনের ওয়েটিং রুমে জিঃ আরঃ পিঃ হাজতে অথবা আক্কাস আলী হাইস্কুলে রক্তাক্ত মৃতের স্তুপ দেখিয়ে বলতো, ভাঙ্গী ইয়ে জলদী সাফ করো। মৃত দেহ বয়ে নদীতে ফেলতে হতো এবং ভোর না হতে উল্লিখিত নির্যাতন কক্ষের স্থান পরিস্কার করে ফেলতে হতো। “কত আদমীকে যে এই লোক মেরেছে, কত মা বোহিনের ইজ্জত নষ্ট করেছে তা বলতে পারুম না বাবু।” আক্ষেপের সাথে বলে ছুনুয়া। অনেক সময় দু’এক কথা বলতে গিয়ে নরপশুদের হাতে ওরা মারও খেয়েছে বলে জানায়।