পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ সৈয়দপুরে বাঙ্গালী নিধন অভিযানের সংবাদ ১৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ একটি প্রত্যক্ষ বিবরণ একজন দুঃখিনী সাক্ষী সুরাইয়া বেগম দু'সন্তানের জননী বেগম সুরাইয়া রহমান। বেগম সুরাইয়া রহমান হচ্ছেন সৈয়দপুরের তদানীন্তন হাউসিং এবং সেটেলমেন্ট বিভাগের মহকুমা ইঞ্জিনিয়ার শহীদ ফজলুল রহমানের পত্নী। অশ্রুসজল চোখে তিনি বললেন, ১৯৭১ সালের ১লা এপ্রিল আমার জীবনে সেই ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনলো। আমার ব্যক্তিগত জীবনে ঐদিনই হলো শহীদ দিবস। তিনি বলেছেন, ১লা এপ্রিল বিকেলের দিকে প্রায় ২০ জন হানাদার পাকিস্তানী সৈন্য আমাদের বাঙ্গালীপুরস্থ বাসভবনে আসে। তারা সবাই আমাদের লাইন করালো। আমার সাড়ে তিন বছরের শাহনাজ পারভীন (রুমা) তখন কোলে। হানাদার বাহিনীর ভয়ে সে তাকে চেপে ধরে রয়েছে। আমার স্বামীর গলায় পবিত্র কোরান শরীফ ঝোলানো। বাচ্চাটি কোলে। কোরান শরীফ ছুড়ে ফেলে তারা বলল, কেয়া তুম জয় বাংলা বোলতা? তোম আওয়ামী লীগকে সাথ হ্যায়? এই বলে তারা আমার স্বামী, তার ভাই ১ম বর্ষ এম, বি, এস-এর ছাত্র রফিকুল ইসলাম, তার ভাগ্নে এস, এস, সি পরীক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন, বাসার মালী রুহুল আমীনকে ধরে নিয়ে যায়। ছোট মেয়েটি তখন তার আববুর গায়ের সাথে মিশে ছিল। নামতে চায় না। কিছুতেই সে তার আববুকে ছাড়বে না। আমি তাকে জোর করে নামালাম তার আববুর কোল থেকে। হাউসিং এ- সেটেলমেন্ট বিভাগের ড্রাইভার অবাঙ্গালী আবিদ হোসেন সৈন্যদের সাথে এসেছিল। সে বাসায় ঢোকেনি, বাইরে ছিল। সে-ই হানাদারদের সব খবর দিত। তার এক ভাই নাজিরও হানাদার বাহিনীর দালালী করতো। বেগম সুরাইয়া তাঁর সুখের নীড় ভাঙ্গার কাহিনী বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। অনেক কিছু বলতে চেয়েও তিনি বলতে পারেননি। তিনি বললেন, বাসা থেকে ওদেরকে নিয়ে বেরুবার পাঁচ মিনিট পর আমি কয়েকটা গুলির শব্দ শুনেছি। হয়তো এই গুলিতে ওদের সবাইকে এক সাথে হত্যা করা হলো। আমরা সবাই তাদের চারজনের আগমনের প্রতিজ্ঞা করছিলাম। আমার শাহনাজ তার পিতা, চাচা ও ভাইয়ের প্রত্যাবর্তনের জন্যে উন্মুখ হয়ে প্রহর গুনছিল। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো। আসলেন মেজর গুল, মেজর জাভেদ, ক্যাপ্টেন বখতিয়ার, কর্নেল শফি। তারা আমাদের ছাদের উপর কামান বসালেন। দারুণ উত্তেজনা, অশান্তি ও দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে রাত্রি কাটালাম।