পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○br বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড পাড়ার লোকেরা গুলির শব্দ শুনে শুনে গুণে রাখতো তাই পরের দিকে পশুরা ইলেকট্রিক শক দিয়ে মেরে ফেলতো। হেলাল পার্কের সংলগ্ন ওয়াপদা রোড পাড়ার আবদুল ওয়াদুদ খান শহীদ। কলেজের ছাত্র। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে সে গুপ্তচরবৃত্তি করছে বলে তাকে একবার নয় দু-দুবার ধরা হয়েছিল। শেষ বার ৬ই অক্টোবর প্রথমে তার বন্ধু মকসুদার রহমান মুকুল এবং পরে শাহীনকে ধরা হয়। শাহীন আমাকে জানালো, “ওরা প্রথমে আমাকে সিকিউরিটি অফিসারের কাছে নিয়ে গেল। আমি মুক্ত এলাকায় যাতায়াত করার কথা স্বীকার করি। স্বীকার করার উপায় ছিল না। ওদের লোকেরা আমার যাতায়াতের সঠিক খবর রাখতো। মেজর ছিল না তাই আমাকে এক ঘন্টার জন্য ছেড়ে দেয় হলো বলা হল, যদিনা ফিরে তবে আমার বংশে বাতি দেওয়ার মতও কাউকে রাখা হবে না। অগত্যা এক ঘন্টা পর ফিরতে হলো। মেজরের জিজ্ঞাসাবাদের পর কফিল শাহর গুদাম ঘরে হাত আর চোখ বেঁধে শুরু হলো নির্যাতন। সেই ঘরে বিমান বাহিনী থেকে আগত একজন মুক্তি সেনাকে রক্তাপুত ও উলঙ্গ অবস্থায় তিনি দেখতে পেয়েছেন।” শাহীন জানাল আমার সামনেই দলে দলে লোক ধরে আনছে আর চালাচ্ছে অকথ্য অত্যাচার। লেফটেন্যান্ট নেওয়াজ রিজভী, ২৯ ক্যাভালরীর মেজর তহসীন মির্জা এবং মেজর শের খান ও ক্যাপ্টেন খককর গাইবান্ধার হেলাল পার্কের সকল হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের জন্য দায়ী। মেজর শের আলী তহসীন মীর্জা কত মেয়ের যে সতিত্ব হরণ করেছে তার কোন হিসাব নেই। ভরতখালিতে পুরাতন ফুলছড়ি ঘাট ও নয়া ঘাটের লাইনের মধ্যবর্তী স্থানে বহু লোককে খান সেনারা হত্যা করেছে। বগুড়া জেলার শরিয়াকান্দী থানার লোকদেরও ধরে এনে এখানে হত্যা করা হয়েছে। নলডাঙ্গায় আওয়ামী লীগ নেতা একরাম উদ্দীনম, রংপুরের বিশিষ্ট আইনজীবী শ্ৰী বিজয়চন্দ্র মৈত্র (পাখীদা); তার দু'ছেলে এবং গফুর নামক এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। সুন্দরগঞ্জে একদিন সভার কথা বলে ডেকে এনে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনকে হত্যা করা হয়। সাইমাগঞ্জের একটি বর্ধিষ্ণু পরিবারের তিনজনকে খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে ক্যাম্পে ডেকে এনে হত্যা করা হয়েছে। তারা নাকি মুক্তি সেনাদের সহায়তা করতো।