পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ “অমানুষিক নির্যাতনেও তার দৈনিক বাংলা ১৬ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ “অমানুষিক নির্যাতনেও তার মনের বলিষ্ঠতা কমেনি” ৷ ষ্টাফ রিপোর্টার ॥ “আমার আব্বাকে কি মৃত্যুর হাত থেকে ছিনিয়ে আনা যেত না?” সাক্ষাৎকারের শুরুতেই প্রশ্নটি কেরছিলেন বাবুল। বাবুল আওয়ামী লীগ নেতা এবং জাতীয় পরিষদ সদস্য, যশোরের গৌরব, মরহুম মশিহুর রহমানের বড় ছেলে। তাঁর আম্মা এবং অন্য তিন ভাইবোন সহ কলকাতা থেকে ঢাকায় এসেছেন। স্বাধীন বাংলার অঙ্গনে দাঁড়িয়ে আজ বাবুল অসংখ্য প্রশ্নের আঘাতে প্রতিনিয়ত বিধ্বস্ত হচ্ছেন। বোনের বাসা ধানমন্ডিতেই তিনি উঠেছেন। আলাপের প্রথম দিকে স্তব্ধভাবে পাথরের মুর্তির মত বসেছিলেন তিনি। হয়ত শুনেছিলেন তার আত্মজের কণ্ঠের অশ্রান্ত অর্তনাদ-এত লোক থাকতে কেন আমার আব্বা বাঁচলো না? কেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোন আবেদন পৌছালো না আব্বার অমূল্য জীবনের জন্য। একান্ত ধীরস্থির কষ্ঠে বেগম রহমান বললেন তাঁর মহান স্বামী মরহুম মশিহুর রহমানের সাথে তার সেই অবিস্মরণীয় দিনগুলোর কথা। তিনি বলেছিলেন কিভাবে ২৫শে মার্চের কালো রাতটাকে স্ত্রী পুত্র এবং বন্ধু-বান্ধবের অসংখ্য অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি পালিয়ে যাননি। সকলের অনুরোধের উত্তরে একবার শুধু তিনি বলেছিলেন- নির্দয় এই সেনাবাহিনীর হাতে এ দেশের সরল জনগণকে ছেড়ে দিয়ে কি ভাবে আমি শুধু নিজের জীবন রক্ষা করবো। আপন আদর্শে বিশ্বাসী জনাব মশিহুর রহমান নিজস্ব নীতি থেকে কখনো বিচ্যুত হননি। ভীষণ যন্ত্রণা দিয়ে পাকহানাদার বাহিনী তিল তিল করে তাঁকে সংহার করেছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি এই ঘৃণিত পশুর দল প্রথমে তাকে নীতিচু্যত করার জন্য নানা ধরনের অত্যাচার চালায়। শরীরের নানা স্থানে পর্যন্ত লাগানো হয়েছে। অত্যাচারে যখন তার বলিষ্ঠ দেহটা ক্রমে ক্রমে নিস্তেজ হয়ে পড়ছিল তখনও তার মনের বলিষ্ঠতা একটুও কমেনি। সব সময় তিনি একই কথা বলেছেন, “আমি আমার জনগণের বিরুদ্ধে কিছু বলতে বা লিখতে পারবো না।” হুকুম চালায় তখন যন্ত্রণায় শুধু কেপেছেন তিনি। কিন্তু তার বলিষ্ঠ ঠোট দুটো একটুও কাঁপেনি। প্রতি দিনে একে একে হানাদার পশুরা তাঁর দুই পা, দুই হাত কেটে বিকলাঙ্গ দেহের, পরে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে তখনও একটু কেপে ওঠেনি তাঁর দৃঢ়ভাবে বন্ধ ঠোট দুটো। বেগম রহমান জানেন তাঁর স্বামীর সেই নৃশংস মৃত্যুর কথা। তিনি সহ্য করতে পারেন না নিষ্ঠুর সেই ঘটনার কোন বর্ণনা। তবুও মাঝে মাঝে তাঁর অবুঝ মন জানতে চায়- কিভাবে স্বাধীন বাংলার মাটি গ্রহণ করবে তাঁর স্বামীর মত মহান প্রেমিকের বিদেহী আত্মাকে।