পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8( Ջ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ফেনীতে পাক বাহিনীর নৃশংসতার দৈনিক আজাদ ২৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ কাহিনী ফেনীতে হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার কাহিনী (নিজস্ব সংবাদদাতা) ফেনী, ২২শে ফেব্রুয়ারী- লক্ষাধিক শরণার্থীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও তথায় কর্মচাঞ্চল্য শুরু হওয়ার পর জেলার ক্ষয়ক্ষতি ও গণহত্যার আরও চাঞ্চল্যকর বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে। প্রকাশ, ফেনী মহকুমার ১ লক্ষ ২০ হাজার শরণার্থীর মধ্যে ইতিমধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ১৮ হাজার ফিরে এসেছে। এদের লুষ্ঠিত দ্রব্যাদি পুনরুদ্ধার ও দখলকৃত সম্পদ দেয়ার জন্য গণপরিষদ সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিগুলো দ্রুত কাজ করে যাচ্ছে। জানা গেছে যে, গত ২৩শে এপ্রিল পাক হানাদাররা ফেনী মহকুমায় প্রবেশকালে সর্বপ্রথম দরবেশ আব্দুল কাদেরকে গুলী করে হত্যা করে। তারা ফেনী শহরের প্রবেশকালে দেওয়ানগঞ্জ, আমতলী ও শহরতলীতে কয়েকশত লোককে হত্যা করেছিল। দীর্ঘদিন পর্যন্ত দেওয়ানগঞ্জের ট্রাঙ্করোডের পার্শ্বে বহু নরকঙ্কাল পড়ে থাকতে দেয়া যায়। শহর উপকণ্ঠে একটি সরকারী ভবন সংলগ্ন বধ্যভূমিতে শতশত দেশপ্রেমিককে ধরে এনে হত্যা করা হয়। একই সময়ে বর্বরেরা মার্চেন্ট সমিতির কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তারকে অপর ৮ জনের সঙ্গে বেঁধে গুলী করে হত্যা করে। ফেণী কলেজের পার্শ্ববর্তী একটি গোপন বধ্যভূমিতে বাহির থেকে বহু লোক ধরে এনে হত্যা করা হয়েছে। এ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদশী একজন রেলকর্মীর কাছ থেকে এ সংবাদ জানা গেছে। এছাড়া ধুমঘাট রেলওয়ে পুলের পার্শ্বে বৃদ্ধ যুবক ও অগণিত বালককে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। জনৈক উর্দুভাষী ষ্টেশনের অদূরে এক বাঙ্গালী ভদ্রলোকের বাড়ীতে তিনটি বয়স্ক মেয়েসহ আশ্রয় নিয়েছেল। তাদের লাশ পাওয়া যায়। পাক বর্বরেরা ধুম এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ ৩ শতাধিক লোককে হত্যা করে আর ১০২ টি ঘর ভস্মীভূত করে। মে মাসে ফেনী রেলষ্টেশনের পিছনের ডোবায় বহু অফিসারকে হত্যা করে নিক্ষেপ করা হয়েছে। পাক হানাদারদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল কুখ্যাত মহকুমা প্রশাসক বেলাল আহমদ খান। ফেনীতে ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনায় ও লুণ্ঠনকাজে নেতৃত্ব দিয়েছিল সে। ব্যক্তিগত শত্রতার বশবর্তী হয়ে সে বহু বিশিষ্ট লোককে হত্যা আর তাদের বাড়ীঘর বিধ্বস্ত করতে সহায়তা করেছে। রাজাকার ও বদর বাহিনীর শয়তানেরাও বহু বিশিষ্ট লোককে হত্যা করেছে। ফেনী এলাকার খালবিলে আর নদীতে মাছ ধরার সময় এখনও বহু নরকঙ্কাল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে।