পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড
৪৫৭

তারা গর্ত করে সেগুলোকে মাটিচাপা দিয়ে রাখে। এর আগে লাশের মধ্যে থেকেও ঘড়ি, আংটি, কলম ও অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্য লুটপাট করে।

 এছাড়া এই পশুরা বাঙ্গালীদের ‘মিলিটারী ফের আয়েগা’ বলে বার বার ভয় দেখায়। ফলে মিল অঞ্চলের বাঙ্গালীরা সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে কেবল প্রাণ হাতে করে যেতে বাধ্য হয়। মিসেস আজিমও তার এক ছোট ভাই ও সন্তানদের সঙ্গে করে মিল এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন গ্রামে। মিসেস আজিম জানালেন, আজিম সাহেব গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলের গাড়ী ব্যবহার করতে দিয়েছেন, সাহায্য করতে চেষ্টা করেছেন নানাভাবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের প্রথম অবস্থায় হানাদার বাহিনীর মেজর আসলাম গোপালপুরে নিহত হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে।

 তাই মিলে হত্যাকাণ্ড চালাবার আগে হানাদাররা জানতে চেয়েছিল মেজর আসলামকে কে মেরেছে। মিলের নিরীহ কর্মচারীদের বাঁচাবার আশায় রিজার্ভ বাহিনীর সাবেক লেফটেন্যাণ্ট আজিম বলেছিলেন, আমি মেরেছি, আমাকে ধরে নিয়ে চল তোমরা, কিন্তু মিলের নিরীহ কর্মচারীদের মেরো না। কিন্তু দয়া বলে কোন বস্তু ছিল না পশুদের অন্তরে। তাই মেশিনগান চালিয়ে পাইকারী হত্যা করে পৈশাচিকতার দৃষ্টান্ত রেখে গেছে তারা গোপালপুরের বুকে। যে পুকুরটিতে নরপশুরা ফেলে দিয়েছিল হতভাগ্য মানুষের লাশ, গোপালপুরের সহানুভূতিশীল জনগণ সে পুকুরটির নাম দিয়েছিল ‘শহীদ সাগর’।