পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8u(୪ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড দানবীর নূতনচন্দ্র সিংহও বাঁচতে দৈনিক বাংলা ১৩ এপ্রিল, ১৯৭২ পারেননি দানবীর নূতনচন্দ্র সিংহ গত বছর এই দিনে খান সেনারা তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল তাঁর একমাত্র ইচ্ছে ছিল তিনি যেনো দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারেন। সে ইচ্ছা তার পূরণ হয়েছে। দেশের মাটিতে তিনি মরতে পেরেছেন। তবে বড় নিষ্ঠুরভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে তাঁকেকখনো কেউ যা কল্পনাও করেনি। গত বছর এই ১৩ই এপ্রিল চট্টগ্রামের অদূরে নিজের হাতে গড়া কুণ্ডেশ্বরী ভবনে তাঁকে হত্যা করা হয়। কুণ্ডেশ্বর বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা বাবু নূতন সিংহের কথা বলছি। এপ্রিলের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম শহরের পতন হয়েছিল। ১৩ তারিখে পাক বাহিনী কুণ্ডেশ্বরী আক্রমণ করে। বাবু নূতন সিংহ তখন মন্দিরে প্রার্থনা করছিলেন। স্বাধীনতা ঘোষণার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৭ জন অধ্যাপক সস্ত্রীক আশ্রয় নিয়েছিলেন সেখানে। সৈয়দ আলী আহসান, ডঃ এ, আর, মল্লিক, ডঃ আনিসুজ্জামান, ডঃ কোরাইশী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রাম থেকে আগরতলা যাওয়ার পথে জনাব এম, আর, সিদ্দিকীও কুণ্ডেশ্বরীতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পাক বাহিনীর অগ্রগতির খবর শুনে সবাই কুণ্ডেশ্বরী ছেড়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। বাবু নূতন সিংহকে যাওয়ার কথা বললে তিনি রাজী হননি। বলেছিলেন, যদি মরতে হয় দেশের মাটিতেই মরব। অনেক পীড়াপীড়ির পরও তাকে রাজী করান গেল না। এদিকে পাকবাহিনী দ্রুত এগিয়ে আসছিল। ১৩ই এপ্রিল পাকবাহিনী কুণ্ডেশ্বরী ভবনে প্রবেশ করে। ছেলেরা আগেই পালিয়ে গিয়েছিল। বাবু নূতন সিংহ তখন মন্দিরে প্রার্থনা করছিলেন। জনৈক সালাউদ্দীন তাঁকে সেখান থেকে টেনেহিচড়ে বাইরে নিয়ে এসেছিল। তাঁর চোখের সামনে মন্দির উড়িয়ে দিয়েছিল। তারপর তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল নৃশংসভাবে। মেজর তিনটি গুলি করার পরও সালাহউদ্দীন রিভলবারের গুলি ছুড়েছিল নূতন বাবুর দিকে। তিনি লুটিয়ে পড়েছিলেন। তেমনি মুখ থুবড়ে পড়ে ছিলেন তিন দিন। সংক্ষিপ্ত জীবনী নূতন বাবুর জন্ম ১৯০১ সালে। শৈশবেই তিনি মাতৃ-পিতৃহারা হন। আট বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন। তিনি নয় বছরে বাৰ্মা যান। সেখানে মুদির দোকানে চাকুরী করেন। ১৯২২ সালে চট্টগ্রাম ফেরেন এবং বিয়ে করেন। তারপর কলকাতা যান। ১৯৪৬ সালে ঔষধালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিহারের বৈদ্যনাথ ধামে গিয়ে কুণ্ডেশ্বরী মায়ের কবচ গ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে আবার চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। কুণ্ডেশ্বরী বিদ্যাপীঠ নিজের মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে পারেননি তিনি। সে জন্য একটা ক্ষোভ ছিল মনে। তখন রাউজান থানায় কোন বিদ্যালয় ছিল না। রাউজান থানার মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগের জন্য তিনি গড়ে তুলেছিলেন কুণ্ডেশ্বরী বালিকা মন্দির। পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিদ্যালয় ছিল এটি। শুধু রাউজান থানা নয়, দেশের সব এলাকা যোগাযোগ, পানির পাম্প, জেনারেটর, বাস ইত্যাদি ছিল। মোট প্রায় ২ লাখ টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে সেখানে।