পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ՆԳ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আজ দেবদাস হয়ে পূর্বদেশ ৯ মে, ১৯৭২ হানাদারদের নির্যাতনের লক্ষ্য শিকারের অন্যতম অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আজ দেবদাস হয়ে বেঁচে আছেন নজরুল ইসলাম বুলবুল ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্ক বিভাগের অধ্যাপক জনাব মুজিবুর রহমান পাক বাহিনীর অসহ্য নির্যাতনের সাক্ষী হয়ে আজও বেঁচে আছেন। প্রতিদিনের মত ২৫-এর রাত্রিতেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে বসে গল্প করছিলেন তিনি। রাত্রি গভীর হয়ে গেছে, কিন্তু সেদিকে লক্ষ্য নেই কারো। যাঁদের সঙ্গে গল্প করছিলেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন হিন্দু অধ্যাপক। দেশে যে সামরিক নির্যাতন শুরু হয়ে গেছে তা কারো জানা ছিল না। গভীর রাত। একদল লোকের বুটের শব্দ শুনে সবাই আৎকে উঠলেন। ইতিমধ্যে কয়েকজন পাক সৈন্য ঢুকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে। অধ্যাপকবৃন্দ তখনও বসে আছেন। সৈন্যরা কাছে এসে তাদের জিজ্ঞেস করতে লাগলো। হিন্দু অধ্যাপকগণ নিজেদেরকে মুসলমান নামে পরিচয় দিলেন। কিন্তু মুশকিলে পড়েছিলেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি নিজেকে সে নামে পরিচয় দেবার সাথে সাথে সৈন্যরা তাঁর উপর নির্যাতন চালায়। বেশ কিছুক্ষণ মারধর করে তাঁরা চলে যায়। অধ্যাপক রহমানের একমাত্র দোষ বঙ্গবন্ধুর নামের সাথে তা নামের মিল ছিল। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। ৪ঠা এপ্রিল মুক্তিবাহিনী রাজশাহী শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পাঞ্জাবীদের হাত থেকে মুক্ত করে। ১৩ই এপ্রিল পাকবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা শহরের কর্তৃত্ব হারায়। এরপর শুরু হয় গণহত্যা ও নির্যাতন। ১৪ই এপ্রিল ভাষা বিভাগের একমাত্র হিন্দু অধ্যাপক শ্রী সুখরঞ্জন সমদারকে এবং ১৫ই এপ্রিল অঙ্ক বিভাগের অধ্যাপক জনাব হাবিবুর রহমানকে পাক সেনারা ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। শহীদ সমদার বাবুর মরদেহের অংশবিশেষ কাজলাগ্রাম থেকে উদ্ধার করা গেছে, কিন্তু শহীদ হাবিবুর রহমানের কোন খবর আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় অতিথি ভবনে থাকতেন। ২৫শে মার্চের দুঃসহ বেদনা সহ্য করে তিনি নিজেকে অত্যন্ত অসহায় বোধ করছিলেন। জনাব রহমানের বন্ধুবৰ্গ, যাঁরা ছিলেন হিন্দু, তারা সবাই সীমান্ত অতিক্রম করেছেন। এসব কথা চিন্তা করে জনাব রহমান ক্রমেই মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে লাগলেন। ইসলাম রক্ষার জন্য পাকবাহিনী যে পন্থা অবলম্বন করেছিল তা দেখে মুজিবুর রহমান সাহেব ধর্মের উপর আস্থা হারাতে বসেছিলেন। যদিও ২৫শে মার্চের পূর্ব পর্যন্ত তিনি একজন খাঁটি ইসলামপন্থী মুসলমান হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ইয়াহিয়া এবং তার লেলায়িত সেনাবাহিনী বাংলাদেশের নিরীহ জনগণের উপর ইসলাম রক্ষার অজুহাতে যে অত্যাচার, গণহত্যা আর নির্যাতন চালিয়েছিল তা দেখে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ধর্মের উপর আস্থা হারিয়ে ফেললেন।