পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Գo বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড গাজীপুর অস্ত্র কারখানায় কয়েকজন পূর্বদেশ ১০ মে, ১৯৭২ কর্মচারীর হত্যাকাণ্ড অস্ত্র কারখানার কর্মচারীদের এম, এন, এ হোষ্টেলে এনে হত্যা করা হতো থাকে। তাই প্রথমে অফিসারদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে মেশিনগানের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয়। কিন্তু এই সমস্ত অফিসারদের পরিবারের লোকজনদের কান্নাকাটি ও অনুরোধে তাদের সেই সময়ের জন্য ক্ষমা করে দেয়া হয়। এই সময় গাজীপুর অস্ত্রাগারের আবাসিক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার করিমুল্লাহ কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্ট থেকে হেলিকপ্টার যোগে সেখানে আসে এবং পাক বাহিনীর সেনাদের সাথে গোপন আলোচনা করে। সেই সময় বাঙ্গালী অফিসারদের নিজ নিজ কোয়াটারে চলে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। পরের দিন ৩০শে মার্চ (১৯৭১) পাক বাহিনী বাঙ্গালী অফিসাদের কোয়ার্টারে খানাতল্লাশি করার অজুহাতে তাদের মালপত্র লুট করে নেয়। পরে ২রা এপ্রিল পর্যন্ত প্রত্যেক দিন সিপাহীরা বাঙ্গালী অফিসারদের কোয়ার্টারগুলিতে হানা দিয়ে নানারূপ অত্যাচার করতো। ছেড়ে নানাদিকে পালিয়ে যেতে থাকেন। ৩রা এপ্রিল মধ্যাহ্নে ব্রিগেডিয়ার করিমুল্লাহ ৬ জন অফিসারকে পাকবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঢাকা চলে যাবার নির্দেশ দেয়। এই ৬ জন অফিসার ছিলেন ওয়ার্কস ম্যানেজার জনাব এ, কে মাহবুব চৌধুরী, ডাঃ মেজর নঈমুল ইসলাম, হেডমাষ্টার কুদ্দুস সাহেব, ওয়েলফেয়ার অফিসার মাহবুবর রহমান, ও আরো দু’জন অফিসার। এই সমস্ত অফিসার ও তাঁদের পরিবারদের একটি বাসে করে এবং দু’টি গাড়ীতে করে নিয়ে আসা হয়। বাসে বিহার এবং পাঞ্জাবীদের সাথে পাকবাহিনী বাঙ্গালীদের পাহারা দিচ্ছিল। গাড়ীগুলো যখন কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে পৌছে তখন ব্রিগেডিয়ার কুরিমুল্লাহ, ওয়াহেদ নামক একটি পাঞ্জাবী অফিসারকে বাস থেকে নামিয়ে নিজের গাড়ীতে তুলে নেয়। জনাব মাহবুব চৌধুরী তখন ব্রিগেডিয়ারকে বাঙ্গালী অফিসারদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নামিয়ে দেবার অনুরোধ করেন। কিন্তু ব্রিগেডিয়ার কোন জবাব না দিয়ে গাড়ী নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট কোয়ার্টারের দিকে চলে যায়। আর বাসটি তখন পাক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আবার ঢাকার দিকে চলতে থাকে। বাস ঢাকার এম, এন, এ হোষ্টেলে এসে থামলে পাকবাহিনী সকলকে নিচে নামবার আদেশ দেয়। বাসের বিহারীরা মোহাম্মদপুর চলে যায়। অন্য অবাঙ্গালীরা পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য একটি ট্রাকে চড়ে বিমানবন্দরের দিকে যায়। নিরুপায় হয়ে বাঙ্গালী অফিসারগণ নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যাবার জন্য রিকশা এই সব অফিসারের পরিবারবর্গ তখন হোষ্টেলের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে। একটি নির্জন কক্ষে অজুতেই হেডমাষ্টারের ইমামতিতে নামাজ আদায় করে নেন। নামাজ শেষ হতেই একজন সিপাই হেডমাষ্টার সাহেবের পেন দিয়ে প্রত্যেক অফিসারের পরিচয় লিখে নেয়।