পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ԳՋ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড নির্মম অত্যাচারে - পূর্বদেশ ২০ মে, নিহত ও, সি ՏծԳՀ নরপশুদের নির্মম অত্যাচারে তিলে তিলে ওসি খালেক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন ॥ নুরুল ইসলাম ॥ গত বছর ১৬ই এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম শহরের কোন প্রত্যক্ষদশী যদি শহরের রাজপথে খোলা এক খানি জীপ গাড়ীর সামনে দু’হাত দু’দিকে দিয়ে বিধ্বস্ত একটা লোককে বাঁধা অবস্থায় হানাদার অক্ষরে লেখা কটিও পড়ে থাকবেন, “কোতোয়ালির ওসি খালেক এরেষ্টেড”। সম্ভবতঃ দসু্যরা গ্রেফতারের পর এভাবে আর কোন বাঙ্গালীকে প্রকাশ্য রাজপথে প্রদর্শনী সহকারে পাশবিক অত্যাচার করেনি- কিন্তু কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার জনাব আব্দুল খালেককে নিয়ে তারা তাই করেছে। শুধু তাই নয়, চলন্ত গাড়ীতে পশুর দল রাস্তার মানুষকে সাক্ষী করে ওসি খালেকের গায়ে জুতা, লাঠি, কিল, ঘুষি মারতো। এভাবে সারা বিকেল তারা শহর প্রদক্ষিণ করিয়ে তাঁকে কোতোয়ালিতে এনে হাজির করে সন্ধ্যায়। তারপর সারারাত বিরামহীনভাবে খালেক সাহেবের উপর চালায় অমানুষিক অত্যাচার। এরপর পাঠানো হয় তাকে ক্যান্টনমেন্টের জল্লাদখানাতে। ১৮ই এপ্রিল বিকেল বেলা জল্লাদখানা থেকে এক ফাঁকে জনাব খালেক তাঁর কাকার বাসায় টেলিফোন করে জানান যে, কাকা যেন তার মুক্তির তদ্বির করেন। খবর পেয়ে তিনি ক্যান্টনমেন্টে যান- খালেক সাহেবের সাথে দেখা করার জন্য। কিন্তু তিনি অনুমতি তো পান। ই-নি, বরং খান সেনাদের অশ্রাব্য গালিগালাজ শুনে বাসায় ফিরে আসেন। ২২শে এপ্রিল সকালের পেরেছেন কিনা । জনাব খালেকের কাকা করম আলী সাহেব আমাকে জানালেন, ২২ তারিখে সকালে সে টেলিফোন করেছিল এবং বিকাল বেলায় আর তাকে জীবিত রাখা হয়নি। প্রথমে হাতের আঙ্গুল ও হাত, এরপর পায়ের আঙ্গুল ও পা কেটে এবং শেষে দু'চোখ উপড়ে ফেলে দেওয়ার পর খালেক আর বেশীক্ষণ বেঁচে থাকেননি। অশ্রুসিক্ত নয়নে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে জনাব আলী বললেন, খালেক পশ্চিম মাদার বাড়িতে আমার বাসায় আশ্রয় নিয়েছিল- সেখান থেকে বাড়ী ঘেরাও করে তাঁকে ধরে নিয়ে আসে এবং আমার টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, রেডিও, সেলাই মেশিন, কাপড়-চোপড়, ট্রাঙ্ক, সুটকেস, দলিলপত্র এবং আমাদের যাবতীয় সার্টিফিকেট তারা নিয়ে যায়। জনাব আলী জানান যে, তিনি খালেককে ছোট বেলা থেকে লালন-পালন করে মানুষ করেছেন- কারণ তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। খালেক সাহেব চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া করে, চাটগাঁ কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেছিলেন। যদিও তার বাড়ী ছিল ঢাকা জেলার অন্তর্গত বৈদ্যেরবাজার থানার মুচার চর গ্রামে, তথাপি তিনি তার এ চাচার লালন-পালনে চাটগাঁতেই ছিলেন আশৈশব