পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড মানুষের তাজা রক্ত এই বুড়ীগঙ্গা নদীর পাড়ে। এই টার্মিনাল শেড ছিল ২৫শে মার্চের কালো রাত্রিতে ওদের জল্লাদখানা। ওরা বহু মানুষকে ধরে এনে ঐ টার্মিনালে জবাইকরে বেটন ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে টেনে হেঁচড়ে পানিতে ফেলে দিয়েছে। অসংখ্য মানুষকে এভাবে নদীতে ফেলে দেওয়ার পরিষ্কার ছাপ দেখতে পেলাম সেই রক্তের স্রোতের মধ্যে। শেডের বাইরের প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখলাম অসংখ্য কাক ও শকুন মানুেষের সেই রক্তের লোভে ভীড় করেছে। সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বের হয়ে পূর্বদিকে পাক সেনাদের সদর আউট পোষ্টের দিকে দেখলাম নদীর পাড়ের সমস্ত বাড়িঘর ভস্ম হয়ে ওদের নৃশংসতা ও করার ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে, সুইপাররা হাত পা ধরে টেনে হেঁচড়ে ট্রাকে লাশ উঠাচ্ছে, প্রতিটি ঘর থেকে টেনে ট্রাকে উঠাচ্ছিল। পাঞ্জাবী সেনারা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে কুকুরের মত নির্মমভাবে প্রহরা দিচ্ছিল। ভয়ে সন্ত্রাসে আমি আর এগুতে পারলাম না। পূর্বদিকে রাস্তা দিয়ে আমি সদরঘাটের কাপড়ের বাজারের নীরব নিথর রাস্তা ধরে সদরঘাট বেপটিষ্ট মিশনের চৌরাস্তার সম্মুখ দিয়ে নওয়াবপুরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। আমাদের কারো শরীরে পুলিশের পোশাক ছিল না- আমি এবং আমার সাথে আরও দু’জন সিপাহী সাধারণ পোশাক পরে দায়িত্ব পালন করছিলাম। কাপড়রের বাজারের চারদিকে রূপমহল সিনেমা হলের সম্মুখে সর্বত্র বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য মানুষের ইতস্ততঃ ছড়ানো বীভৎস লাশ দেখলাম, বহু যুবতি মেয়ের ক্ষত বিক্ষত লাশ দেখলাম। কলেজ, পগোজ হাইস্কুল, ঢাকা জজকোর্ট, পুরাতন ষ্টেট ব্যাংক বিল্ডিং, সদরঘাট গির্জা, নওয়াবপুর রোডের সর্বত্র, ক্যাথলিক মিশনের বাইরে এবং ভিতরে আদালত প্রাঙ্গণে বহু মানুষের মৃতদেহ দেখলাম। রাস্তায় রাস্তায় দেখলাম পুলিশের পোশাক পরা বহু মৃতদেহ, রায় সাহেব বাজার ব্রিজ পার হয়ে নওয়াবপুর রোডে পা দিয়েই দেখলাম বিহারীদের উল্লাশ ও উন্মত্ত লাফালাফি, ওরা পশুর মত অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে অসংখ্য বাঙ্গালীর লাশ পাড়িয়ে জয়ধ্বনি করে মিছিল করে নওয়াবপুরের রাস্তায় বের হয়ে পড়ছিল। পাঞ্জাবী সেনা কতৃক বাঙ্গালী বালক ও শিশুর লাশ বিদ্ধ করে খাড়া করে রাখ হয়েছে। দেখলাম উন্মত্ত বিহারী জনতা রাস্তায় পড়ে বেরিয়ে পড়ে উল্লাশ করছে, রাস্তার দুই পার্শ্বে সর্বত্র আগুন আর আগুন দেখলাম। বিহারী জনতা রাস্তার পার্শ্বের প্রতিটি বাড়িতে প্রবেশ করে আগুন লগিয়ে দিয়েছিল, জুলছিল বাঙ্গালীদের ঘর বাড়ি, আসবাবপত্র পন্যদ্রব্য, পোশাক পরিচ্ছদ মূল্যবান জিনিসপত্র। ঠাটারী বাজারের ট্রাফিক ক্রসিংয়ে এস দেখলাম একটি যুবক ছেলের বীভৎস লাশের উপর পেট চিড়ে বাঁশের লাঠি খাড় করে, লাঠি মাথায় স্বাধীন বাংলার একটি মলিন পতাকা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। লাশের উপর জয় বাংলার পতাকা ঝুলিয়ে রেখে বিহারী জনতা চারদিকে দাঁড়িয়ে থেকে হাসছে, উল্লাস করছে। দেখলাম লাশের গুহ্যদ্বার দিয়ে লাঠি ঢুকিয়ে আনন্দ প্রকাশ করছে। বিজয় নগরের জুলছে। আমি কোতোয়ালী থানায় দায়িত্ব পালন করতাম, ৩০শে মার্চ কোতোয়ালী থানর মধ্যে আমরা কামরায় কামরায় প্রবেশ করে দেওয়ালের সর্বত্র চাপ চাপ রক্ত দেখলাম, দেখলাম থানার পায়খান, প্রশ্রাবখানা ও অন্যান্য দেওয়াল গুলির আঘাতে ঝাঁঝড়া হয়ে গেছে। ১৯৭১ সনের মার্চ মাসের পর কোতোয়ালী থানার কোন বাঙ্গালী পুলিশকে বাইরে কোন টহলে পাঠানো হতো না, থানায় বসিয়ে রাখা হতো। এক পাঞ্জাবী মেজর আমাদেরকে তদারক করে যেতেন মাঝে মাঝে এসে। ৫ই এপ্রিল আমাদের সবাইকে কোতোয়ালী থানা থেকে রাজারবাগ