পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8brՋ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ *ওরা সাংবাদিক মেরেছে’ বাংলাদেশে গণহত্যা বাংলার বাণী, Տ5ԳՀ বিশেষ সংখ্যা ওরা সাংবাদিক মেরেছে নিজামুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিক জগতে একটি বিশিষ্ট নাম। এই নামটির সাথেই সম্পর্ক ছিল বিপিআই; বিবিসি: এপিএ, ইউপি, আই’র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা চূড়ান্তরূপ নেয়ার প্রাকমুহুর্ত পর্যন্ত বৃটিশ ব্রডকাষ্টিং কর্পোরেশনের (বি, বি, সি) অনুষ্ঠান শুনতে গিয়ে যেসব সাংবাদিকের পাঠানো সংবাদ শুনতে বহু উদগ্রীব হয়ে থাকতেন তাদের মধ্যে নিজামুদ্দীন আহমেদ অন্যতম। এখানে বি, বি, সি’র সংবাদ ঘোষকদের কণ্ঠ থেকে খবর ভেসে আসে নিয়মিত প্রতিদিন, কিন্তু শোনা যায় না একটি ঘোষণা ঢাকা থেকে আমাদের সংবাদদাতা নিজামুদ্দীন আহমেদ খবর পাঠিয়েছেন। কয়েক মাস আগে পর্যন্ত সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকতো তাঁর পাঠানো সংবাদ শোনার জন্যে, আর অবাক হয়ে ভাবতো কি দুরন্ত সাহস লোকটার। সাড়ে ৭ কোটি বাঙ্গালীর স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে কেমন করে তিনি সেদিন পাঠিয়েছেন খবরের পর খবর- বাংলাদেশে পাক বর্বর বাহিনীর হত্যাকাণ্ড আর ধ্বংসলীলার খবর পাঠিয়ে জাগিয়ে তুলেছেন বিশ্ব মানবতাকে। আর মুক্তিযোদ্ধাদের এক একটি দুঃসাহসিক অভিযান সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ করে অনুপ্রাণিত করে তুলেছেন বাংলাদেশের মানুষকে। আলবদর তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় ১২ই ডিসেম্বর দুপুর দুটোয় তাঁর একান্ত প্রিয়জনের মাঝ থেকে। সে দিন তাঁর প্রিয়জন, তাঁর স্ত্রী, তাঁর ১১ বজরের মেয়ে শিল্পী, ৯ বছরের রিমি আর ছোট্ট বাপ্পি অবাক বিস্ময়ে আর্তনাদেও নরপিশাচদের মন এতটুকু টলেনি। তাকে নিয়ে যাবার পর ছোট্ট শিল্পী, রিমি, বাপ্পি তাদের বাবার ফিরে আসার অধীরতর অপেক্ষায় কাল কাটিয়েছে, মিসেস আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন বারবার কিন্তু সব কিছুই নিস্ফল। বাংলাদেশ হানাদারমুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসেছেন তাঁর বন্ধুবান্ধব তাঁর সৎসাহসের জন্য প্রশংসা জানাতে। তাঁর নির্ভীকতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। কিন্তু নিজামুদ্দীন আহমেদ আর ফিরে আসেননি তাঁর প্রিয়জনের মাঝে। সাংবাদিক জগতে নিজামুদ্দীন আহমেদের পরিচিতি দীর্ঘদিনের। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি জড়িয়ে পড়েন এই পেশায় এবং সে সময়ই তিনি সিভিল এন্ড মিলিটারী গেজেট, দৈনিক মিল্লাত’ ইত্যাদির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হন। এরপর তিনি তদানীন্তন পিপিআই’র প্রথম ও একমাত্র সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন ১৯৫৮ সালে। পরবর্তী পর্যায়ে এই প্রতিষ্ঠানকে তিনিই সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে গড়ে তোলেন এবং ১৯৬৪ সালে এর সম্পাদক হন। নিখোঁজ হবার দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের সহকারী কর্মকর্তা।