পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

는 8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড পুলিশ লাইনে আনা হয়। পুলিশ লাইনে এসে আমাদের ব্যারাক কেন্টিন, আসবাবপত্র, পোশাক পরিচ্ছদ সবকিছুর ভস্ম ছাই দেখলাম। তিন নম্বর ব্যারাকে প্রবেশ করে আমার দু’জন প্রিয় সিপাহীর অগ্নিদগ্ধ লাশ দেখলাম-লাশের পায়ে শুধুমাত্র বুট ছিল, তাদের পোশাক পরিচ্ছদ সারা দেহ জুলে শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমার প্রিয় সিপাহী জাহাঙ্গীর ও আবদুস সালামের বীভৎস লাশ দেখে আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। লাশের দিকে মাথ নত করে আমার দু’জন বীর সিপাহীকে সালাম জানালাম, অশ্রুসিক্ত নয়নে পুলিশ লাইনের উত্তর পূর্বদিকের পুকুরের উত্তর পাড়ে শহীদ সিপাহীদের যথার্থ মর্যাদার সাথে সমাহিত করলাম। পুলিশ লাইন থেকে পাঞ্জাবীরা চলে গেলেও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে চরম ভয় ভীতি, সন্ত্রাস ও হতাশা বিরাজ করছিল। আমরা সব সময় মৃত্যু ভয়ে ভীত ও আতঙ্কগ্রস্ত থাকতাম। ঢাকা ডিষ্ট্রিক্ট বিশেষ পুলিশ ফোর্সের রিজার্ভ ইন্সপেক্টর ছিলেন এ সময় বোস্তান খাঁ নামে এক চরম বাঙ্গালী বিদ্বেষী পাঠান ভদ্রলোক। এ ভদ্রলোক পুলিশ লাইনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেই চরম সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তিনি ৬ই এপ্রিল লাইনে বসেই বাঙ্গালী পুলিশের সাথে কুকুরের মত যথেচ্ছ ব্যবহার আরম্ভ করে দেন। লাইনে প্রবেশ করে আর কোনদিন লাইনে ফিরে আসেনাই। সাথে সাথে ঢাকা সেনানিবাস থেকে মিলিটারী ট্রাকে করে পাঞ্জাবী ও নাম্বার জিজ্ঞাসা করতে করতে অকস্মাৎ অনেককে “তোম মালা মুক্তি বাহিনী হায়, চলো” বলে গরুর মত বুটের লাথি মারতে মারতে ট্রাকে উঠিয়ে নিয়ে যেত। আমি তখন পি, আর, এফ-এর ফোর্স সুবেদার ছিলাম। মিলিটারী ট্রাক লাইনে প্রবেশ করার সাথে সাথে আমি যে কোন অজুহাতে লাইনের বাইরে চলে যেতাম। পঞ্জাবী সেনারা লাইনে প্রবেশ করলে লাইনের সর্বত্র যেন সবার মুখে মৃত্যুর কালোছায়া নেমে আসতো। বাঙ্গালী পুলিশ যার যার মত ব্যারাকে প্রবেশ করে ওদের দৃষ্টির আড়ালে থাকার চেষ্টা করতো। কারণ ওদের দৃষ্টিতে পড়ে গেলেই ওরা যে কোন অজুহাতে বাঙ্গালী পুলিশদের বিপন্ন করতো, বিপদগ্রস্ত করে তুলতো। ১৯৭১ সনের মে মাসে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পশ্চিম পাকিস্তানী পাঞ্জাবী পুলিশ এসে গেলে পাঠান রিজার্ভ ইন্সপেক্টর কুকুরের মত অট্টহাসীতে ফেটে পড়ে বলতে থাকে “যাও শালা লোক শোয়ার কা বাচ্চা হামারা ব্যারাক ছোড়ো, হামারা আদমী আগিয়া, শালা লোগ, ভাগো”। একথা বলার সাথে সাথে বিহারী, পাঞ্জাবী, পাঠান পুলিশ ও পশ্চিম পাকিস্তানী পোশাক পরিচ্ছদ, আসবাপত্র সবকিছু ব্যারাকের বাইরে ফেলে দিয়ে আমাদের ঘাড়ে ধরে বের করে দেয়। আমরা বাঙ্গালী পুলিশরা অসহায় এতিমের মত আমাদের পোশাক পরিচ্ছদ কুড়িয়ে নিয়ে লাইনের আস্তাবলে বারান্দায় গাছের নিচে উন্মুক্ত প্রঙ্গণে আশ্রয় গ্রহণ করি। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে যোগদান করার পর আমরা দেখেছি পাঞ্জাবী সেনারা মিলিটারী ট্রাকে ও জীপে করে প্রতিদিন স্কুলে, কলেজে, ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের, ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বালিকা, যুবতী মেয়ে ও সুন্দরী রমণীদের ধরে আনতে থাকে। অধিকাংশ বালিকা, যুবতী মেয়ের হাতে বই ও খাতা দেখেছি। প্রতিটি মেয়ের মুখমণ্ডল বিষন্ন, বিমর্ষ ও বিষময় দেখেছি। মিলিটারী জীপে ও ট্রাকে যখন এভাবে যুবতী মেয়েদের রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আনা হতো তখন পুলিশ লাইনে হৈচৈ পড়ে যেত, পাঞ্জাবী, বিহারী ও পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ জীভ চাটতে চাটতে ট্রাকের সম্মুখে এসে মেয়েদের টেনে হেচড়িয়ে নামিয়ে নিয়ে তৎক্ষণাৎ দেহের পোশাক পরিচ্ছদ কাপড় চোপড় খুলে তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে উলঙ্গ করে আমাদের চোখের সামনেই মাটিতে ফেলে কুকুরের মত ধর্ষণ করতো। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও অঞ্চল থেকে ধরে এ সকল যুবতী মেয়েদের সারাদিন নির্বিচারে ধর্ষণ করার পর বৈকালে আমাদের পুলিশ হেডকোয়ার্টার বিল্ডিং এর উপর তাদেরকে উলঙ্গ করে চুলের সাথে লম্বা লোহার রডের সাথে বেঁধে রাখা হতো। রাতের বেলায় এসব নিরীহ বাঙ্গালী নারীদের উপর অবিরাম ধর্ষণ চালানো হতো। আমরা গভীর রাতে