পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Տo বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড এ সময় এ মহতি প্রতিষ্ঠান ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের অন্যান্য সবাই প্রাণের মায়ায় কলেজ ত্যাগ করে চলে গেলেও কয়েকটি প্রাণী এ কলেজ ত্যাগ করেননি। সম্ভবতঃ এ প্রতিষ্ঠানের মায়ায়। এ প্রতিষ্ঠানের সব কিছুকে অক্ষত রাখার জন্যই তাদের এ ব্যর্থ চেষ্টা। এদেরই একজন চৌকিদার গাজী হলেন হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত প্রথম বীর সৈনিক। অধ্যক্ষ কর্নেল রহমান তাকে নিজ সাইকেল দিয়ে পাঠিয়েছিলেন ঝিনাইদহের অবস্থা দেখে আসতে। কর্তব্যনিষ্ঠ এ মহাপ্রাণ লোকটি তার দায়িত্ব পালন করতে যখন ঝিনাইদহ শহরের দিকে এগুচ্ছিলেন, তখন হানাদার বাহিনীর নির্মম বুলেট এসে তার বক্ষ বিদীর্ণ করে দেয়। তার কঙ্কাল পাওয়া যাবে। এরপর ঐদিন বেলা চারটার দিকে হানাদার বাহিনী কলেজে ঢুকে অধ্যক্ষ কর্নেল রহমান (মরহুম), অধ্যাপক আবদুল হালিম খান (মরহুম), ইলেকট্রিশিয়ান মোহাম্মদ আলী ও অধ্যক্ষের বাবুচী আবুল ফজলকে ধরে নিয়ে যায়। আর্মির একজন সিনিয়র অফিসারকে সামান্যতম সম্মানও তারা দেখায়নি। অন্যান্যদের সাথে তাকেও তারা হাত বেঁধে নিয়ে যায়। বিভিন্ন ক্যাম্পের বিভিন্ন লোকের কাছে তারা লাঞ্ছিত হন। এদেরকে এরা নির্মমভাবে প্রহার করে। এরপর প্রহসনস্বরূপ অধ্যক্ষ ও অধ্যাপকের হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে পাশের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় তদানীন্তন যশোহর গ্যারিসন কমাণ্ডার ব্রিগেডিয়ার দুররানীর কাছে। ব্রিগেডিয়ার তাদের চা পরিবেশন সারেন। মৌখিক ভদ্রতাও দেখালেন ও সর্বোপরি ক্ষমা প্রদর্শন করে তাদের রাত বারটায় কলেজে গেটে পৌঁছে দেওয়ালেন। ক্লান্ত অবসন্ন ক্ষুধার্ত চারটি প্রাণী কলেজে এসে সে রাতের জন্য মসজিদে আশ্রয় নিলেন। পরের দিনটা ভালই কাটল। এরপর এলো ১৮ই এপ্রিল। কলেজে মাত্র চারটি প্রাণী আছেন- অধ্যক্ষ, অধ্যাপক হালিম খান, বাবুর্চী আবুল ফজল ও হসপিটাল এ্যাটেনড্যান্ট শামসুল আলম। চারিদিক জনপ্রাণীহীন, খা খাঁ করছে। একটা থমথমে ভাব। মাঝে মাঝে এ স্তব্ধতা ভেঙ্গে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়কে দ্রুতগামী আর্মির গাড়ীর আওয়াজ। একটা অমঙ্গলের ছাপ যেন চারদিকে বিরাজ করছে। সবেমাত্র অধ্যক্ষ কর্নেল রহমান ও অধ্যাপক হালিম খান দুপুরের খাবার খেয়ে অধ্যক্ষের বাংলোর উপর তলায় বিশ্রামের জন্য গেছেন। যাবার সময় হসপিটাল এ্যাটেনড্যান্টকে তাদের দুজনার জন্য ঔষধ আনতে বলে গেছেন (আগের দিনের প্রহারের ফলে দুজনারই নাক মুখ ফুলে গিয়েছিল ও কানে ব্যথা হয়েছিল)। হসপিটাল এটেনড্যান্ট সবেমাত্র সাইকেলে করে অধ্যক্ষের বাংলো গেট পার হয়ে কিছুদূর গেছে। এমন সময় পেছনে ১ নম্বর গেট ভেঙ্গে কয়েকটা আর্মি ট্রাক কলেজে ঢুকে পড়ে এবং অধ্যক্ষের বাংলোর দিকে এগিয়ে যায়। এই দলটি আসছিল কুষ্টিয়া থেকে। এদের অধিনায়ক ছিল ১২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন ইকবাল। এই নরপিশাচের আদেশে জোওয়ানরা অধ্যক্ষকে, অধ্যাপক হালিম খানকে ও বাবুর্চী আবুল ফজলকে ঘর থেকে বের করে গেটের নীচে বসায়। হানাদার বাহিনীর সাথে ছিল তাদের চর কয়েকজন বিহারী। এদের মধ্যে সব চাইতে বেশী উদ্যোগী ছিল ঝিনাইদহে টমেটো নামে পরিচিত বিহারীটি। এই নরপিশাচ অধ্যাপক হালিম খান ও অধ্যক্ষ কর্নেল রহমানের নামে তার পরিবারবর্গ নিধনের মিথ্যে অপবাদ দেয়। আর এই মিথ্যে অপবাদের উপর ভিত্তি করেই ক্যাপ্টেন ইকবাল তার ও তার অনুচরদের হাতে ছেড়ে দেয় অধ্যাপক হালিম খানের প্রতিশ্রুতিশীল জীবনকে। অধ্যক্ষের বাংলোর পেছন দিকে এরা অসহায় হালিম খানকে নিয়ে বেয়োনেট আর তলোয়ারের নির্মম আঘাতের পর আঘাত হানতে থাকে। অধ্যক্ষ এক সময় গর্জে উঠলেন, Don't torture him, if you want to kill him, better shoot. EITTH HS Frí-I SITTE ATF STATI AS নির্ভীক দেশপ্রেমিকের বিশাল দেহ এই দেশের পবিত্র ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে। তারপর চলে এ হত্যাযজ্ঞের আর এক অধ্যায়। অধ্যক্ষকে ঐ একই অপবাদ দেওয়া হয়। তারপর নরপিশাচ ক্যাপ্টেন ইকবালের সাথে কর্নেলের কথা কাটাকাটি হয়। কর্নেল বললেন, “আমি আর্মি অফিসার, আমাকে এমনি