পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8፭b® বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিনের | বাংলাদেশে গণহত্যা বাংলার বাণী, ১৯৭২ মধুদা বিশেষ সংখ্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার প্রিয় মধুদা ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী মধুদা মধুসূদন দে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সকলের প্রিয় মধুদা। মাত্র কয়েকটি অক্ষরের এই নামটিতে তিনি শুধু বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনেই নয়, সবার কাছে ছিলেন প্রিয়-পরিচিত। সবার প্রিয় ছিলেন 'মধুদা। এই ‘মধুদা নিহত হলেন বর্বর পাক-সেনাদের হাতে। পচিশে মার্চের ভয়াল বীভৎস রাত। তার পরদিন সকাল। সন্ত্রস্ত প্রতিটি মুহুর্ত। বর্বর বাহিনী আক্রমণ চালাল জগন্নাথ হলের পার্শ্ববর্তী শিবাবাড়ীতে। মধু বাবু তার পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতেন শিববাড়ী কোয়ার্টারে। বর্বররা ২৬শে মার্চ সকালে আক্রমণ চালাল শিবাবাড়ীতে। নিমর্মভাবে হত্যা করল মধুবাবুর ছেলেকে, পুত্রবধুকে, স্ত্রীকে। বর্বররা মধুবাবুকেও নৃশংসভাবে হত্যা করল। বর্বররা মধুবাবুর বাড়ীর দরজায় সজোরে করাঘাত করল। দ্বিধাসংকোচচিত্তে মধুবাবু দরজার কপাট খুলে দিলেন। সাথে সাথে একজন ভিতরে ঢুকে পড়ল। মধুবাবুকে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। পাশের বাড়ীর আঙ্গিনায় ওরা তাকে আটকিয়ে রাখল। বর্বর দসু্যর লোলুপ-দৃষ্টি পৈশাচিকতায় উন্মত্ত ওরা। সন্ত্রস্ত গৃহবধূ। উন্মত্ত রাইফেল আর প্রলুব্ধ হুঙ্কারের কাছে অসহায় বধূ। প্ৰমত্ত হয়েনারা ছুটে গেল গৃহবধূকে ছিনিয়ে আনতে। লাজনম্র অসহায় বধূর বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা। এ ঘর ও ঘর করে, ছোট ঘরের আঙ্গিনায় ছুটাছুটি করতে লাগলেন মধুবাবুর পুত্রবধূ রাণী। বাঁচবার আপ্রাণ চেষ্টা। চীৎকার করে ছুটছেন এ ঘর ও ঘর। অসহায় গৃহবধূর আর্তি প্ৰমত্ত হয়েনাকে এতটুকু বিচলিত করল না। স্বামী রণজিত দে ছুটে এলেন অসহায় স্ত্রীকে রক্ষা করতে। ক্রুদ্ধ বর্বরের প্রমত্ত হুঙ্কার অধিকতর সোচ্চার হয়ে উঠল। উদ্যত রাইফেলের আঘাতে ওরা লুটিয়ে পড়লো। দাদা-বৌদির কাছে ছুটে এলো ছোটবোন রানু। সকল ঘটনায় একমাত্র প্রত্যক্ষ সাক্ষী পরিবারের এই মেয়েটি। আর সবাই ছোট ছোট। ওরাও দেখেছিল। তাদের আপনজনকে বর্বর নরপিশাচদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত হতে। নরপিশাচদের ভয়ে ওরাও প্রকম্পিত। অসহায় অবুঝ শিশু ওরা। সেদিনের ঘটনাগুলোর প্রত্যক্ষ সাক্ষী ওরা। রানুই ছিল তাদের মধ্যে বড়টি। সে জানে সে দেখেছে নিজেও বর্বরদের শিকার হয়েছে। দাদা-বৌদিকে রক্ষা করতে অবুঝ মেয়ে রানু ছুটে গিয়েছিল পাশের ঘরে। সাথে সাথে বর্বরদের উদ্যত রাইফেলের গুলী তার চোয়ালে আঘাত করল। রানু সেদিন প্রাণে বেঁচে গেল। রণজিত বাবু আর তার স্ত্রীকে হত্যা করে বর্বররা মধুবাবুকে আঙ্গিনায় এনে দাঁড় করাল। একজন দসু্য সেনা উচিয়ে ধরল রাইফ স্ত্রী শঙ্কিত হয়ে উঠলেন, দৌড়ে গিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরলেন। সাথে সাথে বর্বরের উদ্যত রাইফেলের গুলী ছুটে এলো। সাথে সাথে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। গুলীর আঘাতে হাত দুটো তার ঝাঝরা হয়ে গেল। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজে প্রাণ দিলেন। গুলীর আঘাতে মধুবাবুর দেহও জর্জরিত হয়ে গেল। স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে তিনি লুটিয়ে পড়লেন। বর্বররা কি ভেবে তখন চলে গেল। বর্বরদের গুলী রানুকে আহত করেছিল। একটা গুলী তার বুক ভেদ করে বেরিয়ে গেল। ‘তবুও আমি