পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ᎼᏄ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ লেঃ কর্নেল ডাঃ নুরুল আবসার | বাংলাদেশে গণহত্যা বাংলার বাণী, ১৯৭২ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বিশেষ সংখ্যা লেঃ কর্নেল ডাঃ নুরুল আবসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ৷ শামসুল হক আলীনুর ॥ “আমার হাতে একটা পিস্তল তুলে দিয়ে তিনি বললেন, কর্নেল শাহনুরের বদলা হয়তো আমার ওপর থেকেই ওরা নেবে। তোমাকে আত্মরক্ষার জন্যে পিস্তল দিয়ে গেলাম। ওরা তোমার ওপরও আক্রমণ চালাতে পারে। কথাগুলো বলেই তিনি বাইরে এসে দাঁড়ালেন। সশস্ত্র পাকসেনারা তাঁকে গাড়ীতে তুলে নিয়ে চলে গেল। তারপর তিনি আর ফিরে আসেননি।” পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত ৪০ ফিল্ড এ্যাম্বুলেন্সের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডাঃ নুরুল আবসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের পত্নী মিসেস জেবুন্নেসা জাহাঙ্গীর বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে কথাগুলো বললেন।” “বাংলার মাটি আর বাংলার মানুষের প্রতি ভালবাসাই ছিল তার সবচেয়ে বড় অপরাধ। তা না হলে কেন এমন হবে? আমার স্বামী কোন অন্যায় করেননি। তবু কেন ওরা আমার স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করলো? তিনি বাঙ্গালী-এটাই কি তার সবচেয়ে বড় অপরাধ?” একটু থেমে থেমে কথা বলছিলেন মিসেস জেবুন্নেসা জাহাঙ্গীর। তিনি বলেছিলেন একাত্তরের উনিশে মার্চের একটি ঘটনা। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে উচ্চ পদস্থ আর্মি অফিসাদের জরুরী কনফারেন্স। আলোচনার বিষয়-বাংলাদেশের যুবসমাজকে সমূলে উৎখাত করতে হবে। উক্ত কনফারেন্সে ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফি, লেঃ কর্নেল ইয়াকুব মালিক, মেজর আগা বোখারী, মেজর সুলতান (বেলুচ রেজিমেন্টের লোক) সহ অনেক উচ্চপদস্থ পাক আর্মি উপস্থিত ছিলো। সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হলো-বাংলার সংগ্রামী যুব সমাজকে এলোপাতাড়ি ভাবে হত্যা করা হবে। কিন্তু প্রস্তাবের বিরোধীতা করলেন লেঃ কর্নেল জাহাঙ্গীর না, তা হতে পারে না, অসম্ভব। দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে তিনি সেদিন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আর এর পর থেকেই কোন কনফারেন্সে জনাব জাহাঙ্গীরকে ডাকা হতো না। তিনি যেতে চাইলেও তাকে ঢুকতে দেয়া হতো না। এর ক'দিন পর সাহেবজাদা ইয়াকুব আমার স্বামীকে ডেকে পাঠান এবং ক্যান্টনমেন্টের বাইরে যেতে বারন করেন। বললেন মিসেস জাহাঙ্গীর। তারপর এলো পচিশে মার্চ। সেদিন রাত সাতটার দিকে ব্রিগেডিয়ার শফি লেঃ কর্নেল জাহাঙ্গীরকে ডেকে পাঠান ক্লাবে। ক্লাব থেকে ফিরে এসে তিনি আমাকে জানান আজ রাতের বেলায় ওরা হয়তো বাঙ্গালীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। ওদের কথা বার্তায় তাই মনে হয়েছে। কথা শেষ না হতেই ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাতি নিভে গেল। রাতে আমরা আর ঘুমাইনি। শুধু মেশিনগান, কামান আর ট্যাঙ্কের শব্দে বার বার শিউরে উঠলাম। মাঝে মাঝে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মানুষের অসহায় চিৎকারও শুনতে লাগলাম। ক্যান্টনমেন্টের বাইরে আগুনদেখা গেল। আমার স্বামী আমাদের সান্তনা দিতে লাগলেন। যেন আমরা বাইরে বেরুতে না পারি।