পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8bbr বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড লেঃ কর্নেল জাহাঙ্গীর বুঝতে পারলেন তিনি বন্দী। আর তাই তিনি ফোন করে তার ইউনিটের বাঙ্গালী সৈনিকদের সুযোগ বুঝে পালিয়ে গিয়ে বাংলার মুক্তি সংগ্রামে শরীক হতে বললেন। দূরালাপনীতে তিনি তার ইউনিটের বাঙ্গালী সৈনিকদের বললেন মরতে যদি হয় তাহলে বীরের মতোই মরো। আমিও তোমাদের কাতারে এসে শামিল হচ্ছি। কথা শেষ করে ব্রিগেডে যাবার উদ্দেশ্যে বাইরে এসে দাঁড়াতেই পশ্চিমা হানাদার বাহিনী তাকে বাধা দেয় এবং বলে-আপনার বাইরে যাওয়া চলবে না। ২৯শে মার্চ রাতে তিনি খবর পেলেন চট্টগ্রামের কুমিরায় যুদ্ধ করতে গিয়ে বাঙ্গালী সৈনিকদের হাতে লেঃ কর্নেল শাহনুর নিহত হয়েছেন। ৩০শে মার্চ খুব সকালে এক দল পাঞ্জাবী দানব বাসা থেকে তাকে গাড়ীতে উঠিয়ে নিয়ে গেল, যাবার আগে আত্মরক্ষার জন্যে তিনি আমাকে একটা পিস্তল দিয়ে গেলেন। এরপর আমি তার আর কোন খোঁজ পাইনি। স্বামী নেই, ঘরে খাবার নেই। দুধের শিশু কাঁদছে, দুধ নেই। এক ফোঁটা পানিও নেই। ঘরের বাইরে গোলাগুলী চলছে। বাইরে বেরুবার পথ বন্ধ। এক ফোঁটা পানির জন্যে ছটফট করেছ আমার সন্তানরা। তবু দানবরা পানি দেয়নি। খাবার দেয়নি। কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন মিসেস জাহাঙ্গীর। আর কেঁদেছি তারপর থেকেই আল্লাহ বৃষ্টি দিয়েছেন। আর আমরা সেই বৃষ্টির পানি পান করেছি। পাত্রে জমিয়ে রেখেছি। বৃষ্টি না হলে ছেলেমেয়েদের বাঁচানো যেতনা, অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন মিসেস জাহাঙ্গীর। এমনিভাবে ক'দিন অনাহারে কাটার পর নরপিশাচরা তাদেরকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি স্কুলে আটক করে রাখে। সেই স্কুলে বাঙ্গালী আর্মি অফিসার ও সৈনিকদের অনেক পরিবারকে আটকে রাখা হয়েছিল। তারপর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে মিসেস জাহাঙ্গীর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানরত অধিকাংশ বাঙ্গালী অফিসার ও সৈনিকদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে তার স্বামী লেঃ কর্নেল জাহাঙ্গীরসহ মুহিদুল জামালের নাম তার স্মরণ আছে বলে তিনি আমাকে বলেন। উল্লেখযোগ্য যে, স্বাধীনতা লাভের পর কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে অসংখ্য বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া যায়। সে সব বধ্যভূমি থেকে লেঃ কর্নেল জাহাঙ্গরসহ অগণিত বাঙ্গালী আর্মি অফিসার ও সৈনিকদের নরকংকাল উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে লেঃ কর্নেল জাহাঙ্গীরের দেহাবশেষ সমাধিস্থ করেন।