পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(0ం বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ হানাদার বাহিনীর সহযোগী আল-বদরদের | সাপ্তাহিক বিচিত্রা জাতীয় দিবসের ১৯৭৩ হত্যার শিকার কয়েকজন বিশেষ সংখ্যা শেষ দিন শেষ কথা অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী চৌদ্দই ডিসেম্বর খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো মুনীর চৌধুরীর। হাতমুখ ধুয়ে ধীরে সুস্থে নাস্তা করলেন। তারপর আবার বিছানায়। রেডিও ছেড়ে শুয়ে শুয়ে খবর শুনতে লাগলেন। সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় পাড়া নিঃঝুম। মাঝে মাঝে ভারতীয় বিমানের হামলা। দু একটা গাড়ী ভর্তি পাকিস্তানী সেনা মাঝে মাঝে ছুটে চলছে। থাকতেন। শুয়ে শুয়ে রেডিও শুনতে শুনতে এক সময় স্ত্রীকে ডেকে বললেন, শোন, আর মাত্র আটচল্লিশ ঘন্টা বাকী আছে দেশ স্বাধীন হতে। সে সময় গলার স্বরে তার স্থির বিশ্বাস ফুটে উঠেছিল। এরই মাঝে স্ত্রী এসে একবার জিজ্ঞেস করলেন তিনি আর এক কাপ চা খাবেন কিনা। সম্মতি জানালেন। তারপর চা খেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলেন। বিছানা ছেড়ে ওঠার পর মুনীর চৌধুরী গোসল করতে ওপরে চলে গেলেন। ময়লা কাপড়-চোপড়ও কিছু ধুলেন। কারণ পরিবারের সবাই তখন ভাগাভাগি করে সংসারে কাজকর্ম সারেন। স্নান সেরে এসে স্ত্রীকে বললেন, যাও তোমার জন্য পানি গরম করে রেখেছি। তুমি গোসল করতে যাও। বলে তিনি নিজের ঘরে গিয়ে চুল আচড়াতে লাগলেন। অসুস্থ স্ত্রীও গোসল করতে যাবার জন্য পা বাড়ালেন। নিশ্চিন্ত মনে চুল আচড়াচ্ছেন মুনীর চৌধুরী। বেলা তখন বারো কি এক। এমন সময় নীচে লোহার গেটে শব্দ শোনা গেল। কে যেন দরজা ধাক্কাচ্ছে। মুনীর চৌধুরীর স্ত্রী উকি দিয়ে দেখলেন কম বয়সী কয়েকটি বাঙ্গালী ছেলে দরজা ধাক্কাচ্ছে। মুনীর চৌধুরী সে সময় স্ত্রীকে বললেন, থাক দেখার দরকার নেই। সরে এসো। বলে তিনি আবার চুল আচড়াতে লাগলেন। স্ত্রীর সাথে মুনীর চৌধুরীর ঐ ছিল শেষ কথা। এমন সময় নীচে থেকে তাঁর ভাই ওপরে এসে বললেন, মুনীর ভাই আপনাকে নীচে ডাকছে। মুনীর চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন, আমার নাম করে বলেছে? হ্যাঁ। পাঞ্জাবী পরে তিনি আস্তে আস্তে নীচে নেমে গেলেন। মুনীর চৌধুরীর স্ত্রী লিলি চৌধুরী কিন্তু তখনও আতংকিত হননি। তাঁর স্বামীকে কেউ যে ধরে নিয়ে যেতে পারে একথাও তার মনে হয়নি। কারণ যারা তাকে ডাকতে এসেছে সবাই কম বয়সী, বাঙ্গালী।

  • একাত্তরে হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ নাগরিকের হত্যা ও নির্যাতনের বিবরণ দানের প্রয়াস বোধ হয় সাধ্য ও সামর্থ্যের অতীত। বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবী এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন। আমরা কেবল তার কতিপয় উদাহরণ উপস্থাপন করছি। ১৯৭৩ জাতীয় দিবস, বিশেষ সংখ্যায় মুদ্রিত সাপ্তাহিক বিচিত্রার এই নিবন্ধটি ১৪ ডিসেম্বর ৭১ তারিখে “আল-বদরদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্ত্রীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রচিত।