পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড গাড়ী করে হাসপাতালে গেলেন ডাঃ চৌধুরী। হাসপাতালে তার সহকর্মীরা তো তাঁকে দেখে অবাক। এই দুর্যোগ আর উনি কিনা এসেছেন হাসপাতালে। তাঁরা বললেন, ডাক্তার সাহেব, আপনি যখন এসেই পড়েছেন তখন আর বাড়ী ফিরতে পারবেন না। এখানেই থেকে যান। ডাক্তার আলীম বললেন, ‘না, না, বাসায় সবাইকে রেখে এসেছি। বাড়ী ফিরে ওদেরকে নিয়ে আবার বেরুতে হবে।’ এরপর ডাঃ চৌধুরী গেলেন মিটফোর্ড হাসপাতালের প্রিন্সিপাল ডাক্তার লতিফের সাথে দেখা সপরিবারে হাসপাতালের কেবিনগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন ডাঃ চৌধুরীও সেরকম একটা আশ্রয় চাচ্ছিলেন। কিন্তু ডাঃ লতিফ আলীম চৌধুরীকে সেরকম কোন আশ্রয় দিতে সম্মত হলেন না। অতঃপর ডাঃ চৌধুরী বিমর্ষ মনে হাসপাতাল ছেড়ে বেরুলেন। ভাইপোর বাসায় যাবেন কেরোসিন আনতে। কেরোসিন নিলেন। ভাইপোকে তেলের দাম দিলেন। ভাইপো তো হেসে অস্থির। ডাঃ চৌধুরী তখন বললেন, “দেখ, মানুষের মরার কথা তো বলা যায় না। এই এখন আমাকে দেখছিস কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমি তো নাও বেঁচে থাকতে পারি।’ ডাঃ চৌধুরী বাড়ী ফেরার জন্য গাড়ীতে উঠবেন ঠিক এমন সময় কার্ফর সাইরেন বেজে উঠলো। ভাইপো তাঁর হাত ধরে তাঁকে থেকে যেতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু তিনি বাসায় যাবেনই। তাঁকে বললেন, ‘আমার গাড়ীতে রেডক্রস চিহ্ন আছে। কিছু ভেবোনা। আমি ঠিক ঠিক বাসায় পৌঁছে যাবো।’ বাসায় ফিরলেন। স্ত্রী সাথে সাথে ঝংকার দিয়ে বলে উঠলেন, কি বলেছিলাম, সেই কাফু পার করে দিয়েই তো ফিরলে।” তিনি বললেন, ঠিক আছে ঠিক আছে। কাল একেবারে সক্কালেই চলে যাবো।’ বেলা দুটো থেকে আবার বোমা বর্ষণ শুরু হলো। দোতলার বারান্দায় বসে সেই বোমা বর্ষণ দেখছিলেন ডাঃ চৌধুরী। বিকেল সাড়ে চার। একটা মাইক্রোবাস এসে থামলো বাসার নীচে। কয়েকজন আলবদর নামলো। ডাক্তার চৌধুরীর স্ত্রী একটু উকি দিয়ে দিয়ে তাদের দেখছিলেন তখন তিনি বললেন, অতো উকিঝুকি দিয়ো না। বোধহয় আর্মি এসেছে বলে তিনি বাথরুমে গেলেন। ব্যাপারটার তেমন গুরুত্ব দেননি স্বামী-স্ত্রী। কারণ মওলানা মান্নানের বাসায় হরদম এ ধরনের লোকজন আসা-যাওয়া করতো। বাথরুম থেকে তিনি বেরিয়েছেন, এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। স্ত্রী বললেন, “বোধহয় আমাদের বাসায়ই আর্মি এসেছে। কি করবো এখন?’ ডাঃ চৌধুরী হঠাৎ বিমূঢ় হয়ে গেলেন। কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এলোমেলোভাবে বললেন, ও, এসেছে, তা দরজা খুলে দাও। একথা বলেই তিনি নীচে নামার উদ্যোগ নিলেন। ডাঃ চৌধুরীর মা তখন বলে উঠলেন, "আরে কোথায় যাচ্ছো?” তিনি বললেন, ‘নীচে, মওলানার কাছে, কারণ মওলানা বলেছিল, এ ধরণের কোন ব্যাপার ঘটলে যেন তাকে খবর দেয়া হয়। নীচে নেমে তিনি মওলানার দরজা ধাক্কা দিতে লাগলেন। এমনিতে মওলানার দরজা সব সময় খোলা থাকতো কিন্তু সেদিন দরজা বন্ধ। এদিকে ডাঃ চৌধুরী দরজা ধাক্কাচ্ছেন, চীৎকার করে মওলানাকে দরজা