পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(*X 8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড পাকবাহিনী ঘেরাও করে ফেললো বাসাটা। একজন অফিসার আমাকে জানালো যে আমাকে তাদের তত্ত্বাবধানে অন্যত্র যেতে হবে। জানি না কি হবে। ঠিক সেই মুহুর্তটাতে ভীষণ সাহসী হয়েছিলাম আমি। কড়াভাবেই সেই অফিসারকে বললাম, লিখিত কোন আদেশপত্র না দেখালো আমি এক পা-ও বাড়াব না। উত্তরে সে উদ্ধতভাবে জানালো যে ভালোভাবে তাদের সাথে না গেলে তারা অন্য পন্থা গ্রহণ করবে। তখন বাধ্য হয়ে আমি বললাম যে, আমার মগবাজার বাসায় যারা আছেন তাদের প্রত্যেককে আমার সাথে থাকতে দিতে হবে। আমার কথায় তারা নিজেরা কি যেনো আলোচনা করলো, পরে তারা রাজী হয়ে নিয়ে এলো আমাদেরকে ১৮ নং রোডের এই বাসাটাতে। ১৮ নং রোডে আসার প্রথম দিনের কথা বলতে গিয়ে আবার হেসে ফেললেন বেগম মুজিব। ময়লা আবর্জনা পূৰ্ণ এই বাড়ীটাতে তখন বসবার মতো কোন আসবাবপত্র দূরে থাক, একটা মাদুর পর্যন্ত ছিল না। জানালার পাশ ঘেষা ৩/৪ ইঞ্চি প্রশস্ত একফালি জায়গায় ঘেষাৰ্ঘেষি করে বসেছিলেন তিনি এবং পরিবারের সমস্ত সদস্যরা। অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে এইভাবে কষ্ট করে বসে থাকতে দেখে সেদিন বুক ফেটে যাচ্ছিল তাঁর। মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেননি, শুধু অসহায়ভাবে তাকাচ্ছিলেন চারিদিক হয়তো অসহায়ের করুণ ডাক আল্লাহতায়ালা সেদিন শুনেছিলেন। প্রহরী পাক-বাহিনীর এক পাঠান অফিসার অনুভব করেছিল তাঁর অসহায় অবস্থাকে। সেই অফিসার একজন ঝাড়ুদার সংগ্রহ করে পরিস্কার করে দেয় ঘর দয়ার- সংগ্রহ করে দিয়েছিল কয়েকটি চেয়ার এবং একটি কম্বল। বন্দী জীবনের নৃশংস পাক-পাহারাদার বাহিনীর মধ্যে এই অফিসারটিই ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম। ধানমণ্ডির এই বাড়ীটার মাঝে অনেক দুঃখ দৈন্যের স্মৃতি চিরদিনের মতো বেগম মুজিবের বুকে আঁকা হয়ে গেছে তবুও এই বাসাতেই তিনি তার প্রথম আদরের নাতীকে বুকে নিতে পেরেছিলেন- এ স্মৃতি তাঁর কাছে কম উজ্জল নয়। -দৈনিক বাং বেগম মুজিবের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাতকার ডিসেম্বরের দুপুর। বঙ্গবন্ধুর ৩২ নং রোডের বাড়ীর দ্বিতলেন বসবার ঘরে বসে কথা বলছিলেন বেগম মুজিবের সাথে। গত বছরের বন্দী জীবনের দুর্বিষহ ও ভয়ঙ্কর মুহুর্তগুলোর কথা। বর্ণনা করছিলেন তিনি... ২৬শে মার্চের পরপরই বড় ছেলে কামাল চলে গেছে ওপারে। হাসিনার শরীর খারাপ। তবুও অসুস্থ শরীরে সেই ছিল আমার সবচেয়ে ভরসা। মে মাসের ১২ তারিখ। ১৮ নং রোডের সেই একতলা করা গৃহে আমাদের নেয়া হয়। হানাদারদের পাহারাতে জীবন কাটাচ্ছিলাম আমি। বাসার যে সব প্রহরী ছিল, তাদের মধ্যে দু’জন সাদা পোষাকধারী সিভিল আর্মড ফোর্সের লোকও ছিল। এরা কার্যত আর্মির প্রহরীদের ঠিক রাখতো। একদিনের ঘটনা। আমার শোবার ঘরে জামাল আর রেহানা ঝগড়া করছিল। বন্দী জীবন জামালের মত ছেলে সহ্য করতে পারছিল না। কেমন যেনো ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। সেদিন তাই ওদের দু’ভাই বোনের ঝগড়াটা একটু বেশী রকমে শুরু হয়েছিল। ওদের ঝগড়ার মাঝেই হুট করে ঘরের মধ্যে সিভিল আর্মড ফোর্সের একজন অফিসার ঢুকলো। চোখ লাল করে হিংস্রভাবে সে জামালকে বললো, তুমি আজকাল বেশী বাড়াবাড়ী করছ। এভাবে গোলমাল করলে আমরা তোমাকে আর্মি