বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫২০ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড করতে আসিনি। আমাকে যুদ্ধে পাঠান। আমার ক্ষোভের কারণ বুঝতে পারলেন এবং ৭নং সেক্টরে সেক্টর কমাণ্ডার কর্নেল নুরুজ্জামানের অধীনে কাজ করার সব ব্যবস্থা করে দিলেন। মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা দিনগুলো কেটেছে আমার ঐ ৭নং সেক্টরেই। এদিকে মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা দিনগুলো দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রতিদিন চলছে সংঘর্ষ। প্রতিদিনই কিছু না কিছু এলাকা মুক্ত হচ্ছে। এরকম সময় (অক্টোবরের ২০ কি ২২ তারিখে) ছোট ভাই মোস্তাকের চিঠি পেলাম-ওরা গ্রুপ নিয়ে দেরাদুনে ট্রেনিং এ যাচ্ছে। শিয়ালদা রেল ষ্টেশনে ওর সাথে দেখা মুখে খোচা খোচা দাড়ি, বিধ্বস্ত শরীর। ওই ওর সাথে শেষ দেখা। আর এক ভাই (রঞ্জ) তখন লড়াই করছে ২ নং সেক্টরে। মঞ্জু ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (পরে সে সাধারণ ক্ষমার সুযোগে মুক্তি পায়।) মুকুল লড়াই করছে পাবনার রণাঙ্গনে। একদিন যুদ্ধের শেষ হলো থেমে এলো রণদামামা। সব পথ তখন এসে মিলেছে ঢাকায়। ঢাকার পতন তখন দিন কয়েকের ব্যবধানে। আমি কিন্তু ৭নং সেক্টরের দায়িত্ব তখনো শেষ করতে পারিনি। দেশে ফেরার পথে পাবনায় ভাইদের মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা শুনলাম। দেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন হবার দিন কয়েক আগে রঞ্জকে শেষ দেখা গেছে ঢাকার রূপগঞ্জে। এদিকে ১০ই ডিসেম্বর অন্যান্য ভাইরা মগবাজারের বাসায় এসে পৌঁছেছে। তাদেরকে দেখতে এসেছে ভগ্নিপতি ইউসুফ। রাতে বাসা রেইড হলো। বাবা-মায়ের অনুরোধে ওরা ফায়ার এক্সচেঞ্জ করা থেকে বিরত থাকলো এবং আত্মসমর্পণ করলো খান সেনাদের কাছে। গাড়ীতে ওদের তোলার সময় সর্বকনিষ্ঠ ভাইটিকে (৭/৮ বছর যার বয়স) মাত্র ওরা ক্ষমা করে ছেড়ে দিলো। কোথায় নিয়ে যাওয়া হলো ওদের কেউ জানে না, কোথায় ওদের কবর তাও কেউ জানে না। বহু লাশ ঘেটে দেখেছি, ওদের চিহ্ন খুঁজে পাইনি কোথাও পারিনি আমার সহোদরদের লাশ সনাক্ত করতে। দুঃখ শুধু এই যে ওরা আমৃত্যু লড়াই করেও প্ৰাণে বেঁচেছিলো। কিন্তু বিজয়ের সূর্য ওঠার পূর্বক্ষণে ওরা হানাদারদের হাতে শহীদ হয়েছে।