পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՋԵr বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড լլ Ե- լ মোহাম্মদ হোসেন ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চ রমনা থানার একজন সাধারণ সিপাহী হিসেবে থানার সম্মুখের প্রাঙ্গণে প্রহরারত ছিলাম। রাত দশটায় আমার কর্তব্য শেষ করে আমি ব্যারাকে চলে যাই। কিছুক্ষণ পরই আমি থানার চারদিকে ভীষণ হৈচৈ, দৌড়াদৌড়ি ও গোলমালের আওয়াজ শুনে থানার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি ইট, পাথর ও গাছ দিয়ে জনতা রাস্তার উপর বেরিকেড তৈরী করছে। এ সময় আমাদের থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ যা প্রয়োজন সে মত অস্ত্র নিয়ে পাক হানাদারদের হামলা প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার জন্য থানার চারদিকে পজিশন নেই। আমরা সেদিন সবাই এই শপথ গ্রহণ করেছিলাম যার হাতে যা আছে তা-ই দিয়ে পাক-পশুদের মোকাবিলা করব, প্রাণ দিব কিন্তু পিছু হটবো না। থানার চার দিকে আমরা সকল পুলিশ সিপাহী ও পুলিশের সকল অফিসার সশস্ত্রভাবে পাক-পশুদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। অলপক্ষণ পরে পাক পশুরা চারদিক থেকে বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ করতে করতে থানায় প্রবেশ করার চেষ্টা করে। আমাদের হাতে সামান্য রাইফেল দিয়ে ওদের প্রাণপ্রণ প্রতিরোধ করতে থাকি। এভাবে পাক-পশুদের অজস্র গুলবর্ষণের মুখে আমরা সারারাত ওদের প্রতিরোধ করেছি কিন্তু আত্ম-সমৰ্পণ করি নাই। আর প্রতিরোধ করার সময় সহস্র গুলিবর্ষণের মুখেও আমাদের কোন সিপাহী বা অফিসার আত্মসমর্পণ করার জন্য কোন দুর্বলতাও প্রকাশ করেন নাই। মৃত্যুর অতি প্রত্যুষে পশুরা থানার পিছনে যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা ওদের প্রতিরোধ করেছিলাম সেখানে প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যাপক তল্লাশী আরম্ভ করে দেয় এবং প্রত্যেক ঘর থেকে আমাদের থানার সশস্ত্র সিপাহীদের বন্দী করে গরুর মত এলোপাতাড়ি পিটাতে পিটাতে থানার পিছরের পুলিশ ব্যারাকে সামনে এনে জড়ো করে বন্দীদের অবিরামভাবে পিটাতে থাকে। ওরা আমাদেরকে উন্মত্তভাবে পিটাচ্ছিল আর বলছিল “শালা মালাউনকা বাচ্চা, হিন্দুকা লাড়কা, শোয়ারকা বাচ্চা শালা তোমহারা মুজিব বাবা আভি কাহা হায়, শালা হারামী, আভি শাপলা জয় বাংলা বোলতা না-ই।” ওদের এলাপাতাড়ি পিটুনিতে আমাদের সিপাহীরা অনেকে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান, অনেকের মুখমণ্ডল রক্তাক্ত ছিল, কারো হাত পা একেবারে ভেঙ্গে গিয়েছিল, আমাদের অধিকাংশ বন্দীর শরীরে কোন কাপড় ছিল না। ওদের নির্মম মারের চোটে কখন যে পরনের বন্ত্র কোথায় পড়ে গিয়েছিল বলতে পারবো না কেউ। আমাদের সকলকে আবার পিটাতে পিটাতে বুটের লাথি মারতে মারতে আমাদের থানার সি, আই, সাহেবের কামরায় জুড়ে বসা পাঞ্জাবী ক্যাপ্টেনের সামনে আমাদের প্রায় উলঙ্গভাবে দাঁড় করানো হয়। ক্যাপ্টেন তখন কর্কশ কষ্ঠে চিৎকার করে বলছিল, “সব শালাকো এক গুলিতে খতম কার দেও” এমন সময় জনৈক পাঞ্জাবী মেজর সেখানে উপস্থিত হয়ে জানান যে, “জি. ও. সি সাহেব বোলা হায় ইন লোগকে রাখ দাও, গোলি মাত করো, বাদমে দেখা যায়েগা।” আমাদেরকে তখন গুলি করা হয় না, বুটের লাথি মারতে মারতে আমাদেরকে থানার সামনে দশ ফুট চওড়া ও আট ফুট লম্বা একটি ছোট কামরায় গরু ছাগলের মত গাদাগাদি করে এনে রাখা হয়। এ ছোট কামরায় আমরা পুলিশ ও পুলিশের উচ্চ পদস্থ অফিসার সহ মোট ৪৭ সাতচল্লিশ জন ছিলাম। আমাদের কামরার চারদিকে পশুরা মেশিনগান নিয়ে প্রহরায় মোতায়েন ছিল সবসময়। বেদম পিটুনি খাওয়ার পর বন্দীরা সবাই কান্নাকাটি করছিল, আমাদের সি, আই মোয়াজ্জেম হোসেন খান, অপমানে এবং বেদমভাবে নির্যাতিত হওয়ায় হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। তার দুই ছেলেও কামরায় গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থেকে সব সময় ভীতসন্ত্রস্তভাবে মৃত্যুর