পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(չ8Գ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড যুগান্তর ৯ মে, ১৯৭১ শরণার্থী আগমন অব্যাহতঃ সমস্যা বাড়ছে (বিশেষ প্রতিনিধি) কলকাতা, ৬ই মে- হলদিবাড়ী শহরে বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য শরণার্থী আসতে থাকায় এক গুরুতর সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোচবিহার জেলা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, দৈনিক গড়ে বারো হাজার মানুষ হলদিবাড়ী আসছেন। জেলা কর্তৃপক্ষ আরো বলেছেন, শহর ও সীমান্ত পরিদর্শন করে দেখা গিয়েছে বুধবার প্রায় বারো হাজার শরণার্থী এসেছেন এবং সীমান্তের ওপারে আরো বাইশ হাজার মানুষ এপারে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন। কোচবিহার জেলার ছোটো শহর হলদিবাড়ীতে এ পর্যন্ত দেড় লক্ষেরও বেশী শরণার্থী এসেছেন। বিভিন্ন বিদ্যালয় ভবন কিংবা খালি বাড়ীতে প্রথম দিকে এদের স্থান দেওয়া হয়েছিল, এখন তাও পাওয়া যাচ্ছে না। বহু শরণার্থীকে আকাশের তলায় রাত কাটাতে হচ্ছে। এই অসহনীয় অবস্থার প্রতীকারের জন্যে জেলা কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের কাছে তাবু এবং ওষুধপত্র চেয়েছেন। কোচবিহারে সোয়া লক্ষ শরণার্থী কোচবিহার থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি হরিপদ মুখার্জি জানাচ্ছেন, বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীরা প্রতিদিনই কোচবিহার জেলাতে যথেষ্ট সংখ্যায় আসছে। এ পর্যন্ত কোচবিহার জেলায় বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সওয়া লক্ষ শরণার্থী এই জেলায় আশ্রয় নিয়েছে। এই জেলার কয়েকটি শিবির ঘুরে দেখলাম, এখনও অনেক সরকারী শিবির দরকার। সরকারী ব্যবস্থাপনায় ইতিমধ্যে ৩৫টি শিবিরে প্রায় পঞ্চাশ হাজার শরণার্থীকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই গ্রামাঞ্চলের স্কুলবাড়ীগুলোই অস্থায়ী শিবিরে পরিণত হয়েছে, তৎসত্ত্বেও আরও বহু মানুষ রাস্তার পার্শ্বে অথবা খোলা মাঠে নিজেদের সতরঞ্চি, চাদর দিয়ে ছাউনি করে কোন মতে মাথা গুজবার ঠাঁই করে নিয়েছে। সরকারী শিবিরে নাম উঠেনি বলে তাদের বাইরের সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর খয়রাতী সাহায্যের উপর নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে। কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ী ও দিনহাটা সীমান্ত দিয়েই বেশী পরিবার আসছে। এক অভিন্ন বৈশিষ্ট্য শরণার্থীরা যাঁরা এ পারের আশ্রয় শিবিরে এসে আশ্রয় নিয়েছে, তাঁদের মধ্যে এক অভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। ধর্ম ও সম্প্রদায়ের কোন পার্থক্য নেই- এক পরিচয় ওরা সবাই বাঙ্গালী। পাশাপাশি একই শিবিরে দুই সম্প্রদায়ের লোক একত্রে রান্নাবাড়া করে খাচ্ছে। খোঁজ-খবর নিচ্ছে। ওপারের আত্মীয়স্বজনের খবর বিনিময় করছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা লড়াই করছেন, ওদের প্রাত্যহিক খবর নেবার জন্য ওরা ব্যাগ্র-কবে ঘরে ফিরে যাবে তারই প্রতীক্ষা করছে। তাই এই বাংলার আতিথেয়তায় তারা মুগ্ধ, সামান্য ত্রটিগুলি তারা ধরছেন না। মন্টুর কথা শিলিগুড়ির নিজস্ব প্রতিনিধি লিখছেনঃ আট বছরের তয়েব বাবা-মাকে হারিয়ে আজ ইসলামপুর স্কুল ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। পাক দস্যরা গুলীতে তার বাবা ও মাকে হত্যা করেছে।