পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

30 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l ○> l মোঃ ওয়াছিম উদ্দিন ডাকঘর- সরিষাবাড়ী ময়মনসিংহ কয়েকশ গজ দূরে অবস্থিত। আমি ছোটবেলা থেকেই অর্থাৎ আওয়ামী লীগের সৃষ্টি হতেই তার সমর্থক। ২৫শে মার্চের কালো রাতের বিভীষিকার পর থেকেই আমি সংগ্রামে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হই। আমার ধানটা মহল্লায় গোবিন্দনগর নিবাসী অফিল উদ্দিন খান নামক একজন বাঙালী প্রাক্তন সৈনিকের দ্বারা ২৫ জন যুবকে রাইফেল ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করি। কিন্তু হঠাৎ টাঙ্গাইল, মধুপুর ও জামালপুর পাক বাহিনীর দখলে যাওয়ায় আমরা প্রকাশ্যে ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করি। সরিষাবাড়ীতে রাজাকার আল-বদরদের প্রাধান্য বাড়ে। পাক বাহিনীও যাতায়াত করতে থাকে। ২রা জুলাই ১৯৭১ইং রোজ শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর থেকে বাসায় বসে আছি। বসেছিলাম একদম নিরিবিলি। বেতারের খবর শুনতেও মন বসছিল না। ক্রমে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হল। চোখে ঘুম নেমে এলো। রাত ১০-১১ টার পূর্বে কোনদিনই নিদ্রামগ্ন হইনি। কিন্তু সেদিন রাত আটটা বাজার আগেই ঘুমিয়েছিলাম। রাত গোটা নয়েকের সময় বেশ কয়েকজনের পদচারণায় এবং আনাগোনায় আমার নিদ্রাভঙ্গ হলো। আগন্তুকেরা পাক বাহিনীর লোক কিন্তু তারা এসেছিল মুক্তি ফৌজের বেশ ধরে। তারা আমাকে চাপা গলায় ডাকতে শুরু করল। আমি তাদেরকে অবিশ্বাস্ত করতে পারিনি। তাই দরজা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। তারা আমার সাথে চুপিসারে কথা বলতে থাকল। আমার নিকট মুক্তিফৌজের জন্য কিছু চাঁদার আবদার জানালো। আমার নিকট তখন মাত্র ১৫ টাকা ছিল তাই তাদের হাতে দিলাম। এরপর তারা আমাকে বাউসার রেল সেতুটা কোন পথে গিয়ে চুরমার করা যাবে তাই দেখিয়ে দিতে বলল এবং এক প্রকার জোর করেই আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলল রেল লাইনের দিকে। আমি কোন কিছু ভাৰ্ব্বার ফুরসত পেলাম না। আমার পরনে ছিল তখন একখানা লুঙ্গি, গায়ে ছিল গেঞ্জি, পায়ে ছিল জুতা। গায়ে জামা দেবার অবকাশ ওরা আমাকে দেয়নি। রেল লাইনে গিয়েই আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। ওরা মুক্তিফৌজ নয়। ক্যাপ্টেন শামশাদের বাহিনী। স্থানীয় আলবদর বাহিনীর ক্যাপ্টেন মাওলানা আনছার আলী, আবু, মুসলিম লীগ দালাল আঃ হক ফেরদৌসি ও নুরুল ইসলাম খান ও আরো অনেকে। সবাই মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, হঠাৎ আমার পার্শ্বেই একটা ফাঁকা গুলি হল। আমি রীতিমত হকচকিয়ে গেলাম। সাথে সাথে আমার হাতে পিঠমোড়া দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলল ওরা। আর বারবার আমার কানের কাছে জয় বাঙলা বলে উপহাস করতে লাগলো। জীবনের আশা নেই নিশ্চিত হয়ে পড়লাম। অদূরে আমার বাসা হতে পরিবার পরিজনের করুন কান্না ভেসে আসছিল। ক্যাপ্টেন শামশাদের হুকুমে ওরা আমাকে নিয়ে আরামনগর মাদ্রাসায় আলবদর ক্যাম্পে রওনা দিল। আমার পায়ের তলা হতে যেন প্রতি পলে পলে মাটি সরে যেতে লাগল। কিভাবে মাদ্রাসা ক্যাম্পে পৌছেছিলাম তা মনে নেই। ওরা আমাকে মাদ্রাসা ক্যাম্পে পাহারায় রেখে চলে গেল সাতপোয়া গ্রামের আঃ মজিদ চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ীতে। অলপক্ষণের মধ্যে তাকে না পেয়ে ফিরে এলো ক্যাম্পে। এরপর আমার হাতের বাঁধন ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখল। আবার যাত্রা শুরু হলো রেল লাইন ধরে সোজা দক্ষিণ দিকে। এই পথে চলার সময় ওরা আমার সাথে যে ব্যবহার করেছিল তা মনে করলে আজও আমার চোখ ফেটে কান্না আসে, আমি যেন একটা বদ্ধ পাগল। কেউ পিছন থেকে দেয় ধাক্কা কেউ দেয় রাইফেলের বট দিয়ে পায়ে গুতো। কেউ পা