পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড দলিল প্রসঙ্গঃ মুজিবনগর-প্রবাসী বাঙালীদের তৎপরতা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাঙালীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সফল করার উদ্দেশ্যে মুজিবনগরে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের অধীনে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, সে-সম্পর্কিত দলিলপত্র এই খন্ডে সন্নিবেশিত হয়েছে। ইষ্ট পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (পৃষ্ঠা ২-৩) এবং ইষ্ট পাকিস্তান লীগ অফ আমেরিকা (পৃঃ ২৩০-২৩২) সহ বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে প্রবাসী বাঙালীরা বিশেষ করে বৃটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনতার লক্ষ্যে আগে থেকেই তৎপরতা চালাচ্ছিলেন; ১৯৭১ সনের ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে তারা সরকারের নেতৃত্বে এই আন্দোলনকে পরিচালিত করেন। বৃটেনে প্রবাসী বাঙালীদের দ্বারা গঠিত ‘এ্যাকশন কমিটি ফর দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামকে সহায়তার উদ্দেশ্যে বিভিন্নমুখী তৎপরতা চালিয়েছিল। বৃটেনের বিভিন্ন শহরে মিছিল ও গণসমাবেশ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সপক্ষে জনমত গঠনের পদক্ষেপ নেয়া হয়। লন্ডনের এমনই একটি সমাবেশে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ভাষণ এখানে সন্নিবেশ করা হয়েছে (পৃঃ ৬১৩-৬১৭)। বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রধানদের প্রতি (পৃঃ ৪৩-৪৫, ১৭৩-১৭৪), বৃটেনের পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রতি (পৃঃ ১৮-২২), বৃটিশ কনজার্ভেটিভ (পৃঃ ৩৫-৩৯) ও লিবারেল (পৃঃ ৬৬০-৬৬১) দলসমূহের প্রতি এবং মার্কিন সিনেটর (পৃঃ ১৬-১৭) ও কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি (পৃঃ ২৪৭-২৪৮) চিঠি ও আবেদন প্রেরণের মাধ্যমে এ্যাকশন কমিটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পাশ্চাত্য-নেতৃবৃন্দের সমর্থন লাভের পদক্ষেপ নিয়েছিলো। পাকিস্তানে বন্দী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানের বিচারের বিরুদ্ধেও তারা আন্দোলন করেছিলেন (পৃঃ ১০-১২, ৯০, ৯৬)। বৃটিশ এবং ওলন্দাজ পার্লামেন্ট সদস্য ও মার্কিন সিনেটরদের ভারত সফরের ব্যবস্থা করে এ্যাকশন কমিটি স্বাধীনতা আন্দোলনকে পৃথিবীর কাছে মাঝে মাঝে বুলেটিন, পত্রিকা ও পুস্তিকা প্রকাশের মাধ্যমেও এ্যাকশন কমিটি বৃটেনসহ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সপক্ষে জনমত গঠনের প্রচেষ্টা নিয়েছে (পৃঃ ৬১-৬৪, ৮২৮৫, ২০০-২০৪, ২১৩-২২০)। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও আন্দোলনকে জোরদার করা হয়(পৃঃ ৬৪৪-৬৪৯)। এছাড়া প্রবাসী বাঙালীদের নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গঠনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়। এই লক্ষ্যে বৃটেনে গঠিত ‘বাংলাদেশ গণসংস্কৃতি সংসদের পক্ষে ডঃ এনামুল হক কর্তৃক বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছে পেশকৃত স্মারকলিপিটি এ খন্ডে মুদ্রিত হয়েছে (পৃঃ ৬৫৪૭?૧)ા বৃটেনে বাঙালী ছাত্র সমাজের তৎপরতা ছিলো উল্লেখযাগ্য। এ্যাকশন কমিটির সঙ্গে একযোগে বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদও পত্রিকা প্রকাশ, সমাবেশ ও সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে (পৃঃ ১৭৬-১৮৪)। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন স্কটল্যান্ড ও বৃটেনের জনগণ, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ও সেগুলির উপাচার্যগণের প্রতি প্রচারপত্র ও আবেদন প্রেরণের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামকে জোরদার করেছিলো (পৃঃ ১৩-১৫, ২৩-২৪)। এ্যাকশন কমিটির তৎপরতার অপর একটি দিক ছিলো চাঁদা সংগ্রহ। বাংলাদেশ ফান্ড’-এর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারের বিভিন্ন কাজে ব্যয়িত হয়েছিলো। এর আয় ও ব্যয়ের হিসাব সংবলিত রিপোর্টটি মুদ্রিত হয়েছে এই খন্ডের শেষাংশে। এ ছাড়া সন্নিবেশিত বিভিন্ন দলিলপত্রের মধ্য দিয়ে এ্যাকশন কমিটি ও পরবর্তীকালে গঠিত এ্যাকশন কমিটিসমূহের ষ্ট্ৰীয়ারিং কমিটি এবং অন্যান্য সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।