পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

197 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড “বাংলাদেশ ষ্টিয়ারিং কমিটি” প্রচারিত বাংলাদেশ ষ্টিয়ারিং কমিটি ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ একটি বিজ্ঞপ্তি লন্ডন জরুরী বিজ্ঞপ্তি স্বাধীন সার্বভৌম গণ-প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবীতে হাইড পার্কে গত রববারের জনসভা ও মিছিলকে কেন্দ্র করে যে তর্কের ঢেউ উঠেছে এবং ষ্টিয়ারিং কমিটি বর্তমানে যে প্রশ্নবাণের সম্মুখীন হয়েছে সে সম্বন্ধে ষ্টিয়ারিং কমিটির বক্তব্য ব্যাখ্যা করে বলার খুবই প্রয়োজন। বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর নির্দেশক্রমে ষ্টিয়ারিং কমিটি এ সভা ও গণমিছিলের আয়োজন করে এবং নিমন্ত্রণপত্র ও খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সমস্ত শাখা কমিটিগুলোর কাছে ঐ সভা ও শোভাযাত্রাকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলার জন্য আবেদন জানায়। বিলাতে সর্বত্র এ্যাকশন কমিটিগুলোর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং দল নিরপেক্ষভাবে সকল বাংগালীর সমবেত প্রচেষ্টায় ঐ দিন হাইড পার্কে প্রচুর লোকসমাগম হয়। সভামঞ্চে ষ্টিয়ারিং কমিটির কাউকে না দেখে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে ষ্টিয়ারিং কমিটি কর্তৃক আয়োজিত জনসভা ষ্টিয়ারিং কমিটি পরিচালনা না করে একটা দলের উপর ছেড়ে দিল কেন? দূর-দূরান্ত থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ এই জন্যই সেদিন প্রতিবাদ করেছে, প্রকাশ্যে ষ্টিয়ারিং কমিটির কাছে কৈফিয়ৎ তলব করেছে এবং ষ্টিয়ারিং কমিটি বাধ্য হয়ে জনতার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু এখন সময় এসেছে সমস্ত কিছু বুঝিয়ে বলার। ঐদিন ষ্টিয়ারিং কমিটি ছাড়াও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ স্বীকৃতির দাবীতে হাইড পার্কে জনসভা এবং সভাশেষে গণমিছিলের বন্দোবস্ত করে। প্রথমে ষ্টিয়ারিং কমিটি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল। পরে যখন পরিচালনা না করে ষ্টিয়ারিং কমিটির সাথে সহযোগিতার অনুরোধ জানান। দুঃখের বিষয়, লীগের এই দলের নেতৃবৃন্দ ষ্টিয়ারিং কমিটির প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। এমতাবস্থায় ষ্টিয়ারিং কমিটি এক জটিল সমস্যার সম্মুখীন হয়। একদিকে জনতার কাছে ওয়াদাবদ্ধ এবং খবরের কাগজের মাধ্যমে বহুল প্রচলিত জনসভা চালিয়ে যাওয়া, অন্যদিকে দুটা সভা হলে গত আট মাস ধরে প্রবাসী বাংগালী জনতা একতা ও দুর্নিবার সংগ্রামের মাধ্যমে যা কিছু অর্জন করেছে তার সবকিছু বিসর্জন দেওয়া। লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে ষ্টিয়ারিং কমিটি এই মর্মে দাবী জানায় যে, খুনী ইয়াহিয়া বাংগালী জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার সংকল্প নিয়ে সেদিন যখন নিরস্ত্র নর নারীর উপর বর্বর আক্রমণ করেছিল তখন ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতবাদ, সকল ভেদাভেদ দলীয় কোন্দল এবং ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে প্রবাসী বাংগালীরা ষ্টিয়ারিং কমিটির জন্ম দিয়েছিল। দেশপ্রেম আর বিবেকের কাছে সেদিন ক্ষুদ্র স্বার্থ ও অহম পরাজয় বরণ করেছিল। স্মরণ থাকে যে, ষ্টিয়ারিং কমিটি এ্যাকশন কমিটিগুলোর সাহায্যে বিদেশে যে সংঘবদ্ধ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তার কাজ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। শত শত শহীদের তাজা রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা কে বানচাল করে দেওয়ার জন্য সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন কুকুর আর বিভ্রান্ত গণচীন আজ বদ্ধপরিকর। তা ছাড়া পৃথিবীর কোন বৃহৎ শক্তির কাছ থেকে আমরা এখনও কোন স্বীকৃতি আদায় করতে পারিনি। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বিরামহীন সংগ্রামের এখন বরং সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। যা হোক আওয়ামী লীগের এই দলটির নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের যুক্তিতর্ক কোন মূল্য বহন করলো না। তাঁরা তাদের সংকল্পে অটল থাকলেন। অতঃপর এই জটিল পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য ষ্টিয়ারিং কমিটি এক জরুরী সভায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আলোচনা করেনঃ