পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

468 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড ঘোষণা করেন। নেতা আজ নরখাদক ইয়াহিয়ার কারাগারে কোথায় কিভাবে আছেন তা আমরা জানি না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ ও তাঁর বজ্রকণ্ঠ আজ প্রতিটি বাঙালীর মনে সদা জাগ্রত যুব সমাজের উপর যে বিশ্বাস স্থাপন করে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন আমরা যুবকেরা যেন তা ভুলে না যাই। আমরা যেন বিশ্বাসঘাতকতা না করি। ভাই-বোনেরা আমার- মনে রাখতে হবে আমাদের সকলের পরিচয় আজ একটি- আমরা মুক্তিযোদ্ধা। অতীতের বিদ্বেষ, ভবিষ্যতের মোহ সবকিছু বিসর্জন দিয়ে আজ আমরা লক্ষ লক্ষ যুবক যদি প্রতিটি পাকিস্তানী ফৌজ খতম করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, পৃথিবীর কোন শক্তিই বাংলার স্বাধীনতাকে রুখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুকেও আমরা কারগার থেকে ছিনিয়ে আনতে পারব। আজ তাই যুবকেরা যেখানেই যে আছেন নিকটবর্তী ট্রেনিং ক্যাম্পে ট্রেনিং নিন। ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক যুবক ট্রেনিং ক্যাম্পে ভর্তি হয়ে পাকিস্তানী হানাদারদের বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করার কলাকৌশল শিক্ষা গ্রহণ করছে, কিছুদিনের মধ্যেই হানাদার বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের নিশ্চিত হত্যা করবে। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি ভাইয়েরা- বাংলাদেশের শতকরা ৮০ জন আপনারা কৃষক ও শ্রমিক। আপনাদেরও আজ শত অত্যাচারের মুখে বাংলার এই মুক্তিযুদ্ধে অংশীদার হতে হবে। আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া এ যুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব নয়। আপনারা আজ নিরস্ত্র। শত্রর মোকাবেলা করার মত অস্ত্র আজ আমাদের হাতে নেই। কিন্তু বুলেট-বেয়নেটের চাইতেও আমাদের বড় অস্ত্র আপনাদের হাতে রয়েছে। অসহযোগ ও আত্মনির্ভরশীলতাই আজ আপনাদের বড় অস্ত্ৰ। ইয়াহিয়া সরকারের কোন আইন আপনারা মানবেন না। বাংলাদেশের উপর আইন প্রয়োগ করার কোন অধিকার তাদের নেই। খাজনা, ট্যাক্স দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিন। যদি কেউ খাজনা নিতে আসে, তাকে ধরে শাস্তি দিন। আমাদের অর্থ দিয়ে আমাদের ংস করার গুলি যাতে না কিনতে পারে তার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের সকল প্রকার দ্রব্যসামগ্রী কেনা বন্ধ করুন। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে এমন দ্রব্যাদি যেমন পাট, চা, চামড়া ইত্যাদির উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিন। প্রত্যেকটি গ্রামে আজ সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীল সমাজ গড়ে তুলুন। খাদ্যের অভাব যাতে দেখা না দেয় তার জন্য ধানের চাষ বৃদ্ধি করুন। মনে রাখতে হবে পরনির্ভরশীলতাই আপনাদের বড় শত্রু। আপনাদের আজ সর্বপ্রথম কর্তব্য- যে সকল জামাত-মুসলিম লীগের দালালেরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সাহায্য করছে, যারা আপনাদের ধনসম্পদ লুট করছে, যারা শত্রসেনাদের কাছে খবরাখবর আদানপ্রদান করছে তাদের হত্যা করা। তাদের নামের তালিকা করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে দিন। মুক্তিযোদ্ধারা আপনাদের আশেপাশেই আছে। ইতিমধ্যেই শত শত দালালদের হত্যা করা হয়েছে। আপনারা প্রত্যেকটি গ্রামবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, খাওয়া ও যোগাযোগের সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করে দিন। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি ভাইয়েরা- মনে রাখবেন এ যুদ্ধ শুধু বাংলার ভৌগোলিক স্বাধীনতাই এনে দেবেন না। এ যুদ্ধের ফলশ্রুতি হিসাবে আপনাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হবে এক শোষণহীন সমাজব্যবস্থা। পাকিস্তানী কুকুর বাহিনীর নৃশংস তাড়নায় বাংলাদেশের ৬০ লক্ষ মানুষ আজ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। শরনার্থী ভাইবোনদের একটি কথা স্মরণ রাখতে হবে। আপনারাও শত্রর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাই আপনারাও এ যুদ্ধের অংশীদার। আপনাদের যে সমস্ত ঘরবাড়ি, ধনসম্পদ ফেলে এসেছেন তা আবার আপনারা ফিরে পাবেন। পাকিস্তানী হানাদারদের দয়ার উপর নয়, কোন বৃহৎ শক্তির চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে নয়- হাতে আমরা অস্ত্র নিয়েছি, রক্ত আমরা দিতে জানি- তাই যুদ্ধ করেই শত্রর মোকাবেলা করে বাংলাদেশের মাটিতে আপনাদের ফিরিয়ে নেব। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে বাংলাদেশের যে দালালরা আপনাদের ধনসম্পদ কেড়ে নিয়েছে, মনে রাখবেন, আপনাদের চোখের সামনেই তাদের একমাত্র শাস্তি