পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

478 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড দাঁড়িয়েছিলেন। আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করবো আমাদের ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের বীরত্ব আজকের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। ই পি আর, আমাদের পুলিশ বাহিনী, আমাদের আনসার, আমাদের মোজাহিদরাও বাংলার মানুষের পাশে এসে দাঁড়াল। বন্দুক আর কামান তুলে নিন। আজ তারা সংগ্রামের পুরোভাগে। বাংলার গ্রামে, বন্দরে, গঞ্জে আপনারা দাঁড়ালেন। আমি কিভাবে যে আপনাদের শ্রদ্ধা জানাব তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না। যে সমস্ত মিথ্যাবাদী বলে আওয়ামী লীগের নেতারা আর সদস্যরা সংগ্রামের পুরোভাগে ছিল না তাদের আমি জবাব দিতে চাই। বাংলার মানুষ জানে আপনারই রয়েছেন পুরোভাগে। আমি জানি চট্টগ্রামে, ময়মনসিংহে, যশোরে, রংপুরে, খুলনায়, বরিশালে, ঢাকায়, ফরিদপুরে বাংলার সর্বত্র আপনাদের নেতৃত্বেই সংগ্রাম হয়েছে। নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে আপনারা গ্রামে-বন্দরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাংলার সৈনিকদের পাশে পাশে আপনারা রয়েছেন। অকুতোভয় আপনারা লড়েছেন। বাংলার সৈনিকেরা যখন বুকের তাজা রক্ত মাতৃভূমির জন্য ঢেলে দিচ্ছেন এর পরে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা না করে আর কি পথ ছিল? স্বাধীনতার জন্য লড়াই না করে আর কি উপায় ছিল? মূলতঃ এবং বাহ্যত বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার মুহুর্তে স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী রেখে যান। আমরা জানতাম বঙ্গবন্ধু যদি গ্রেপ্তার হন, তবে স্বাধীনতা ঘোষণা তিনিই করে যাবেন। আর এই স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্যই আমাদের সংগ্রাম করে যেতে হবে। প্রিয় বন্ধুরা আমার, ২৫শে মার্চের রাতের পরে আমরা বিছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম। তাই স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের ঘোষণা করতে আমাদের একটু বিলম্ব হয়েছিল। আমরা যে পাঁচজন শেখ সাহেবের পাশে ছিলাম এবং যাদের কাছে কথিত, লিখিত, অলিখিত সর্বপ্রকারের দায়িত্ব বঙ্গবন্ধু দিয়ে গিয়েছিলেন- ১৩ই এপ্রিল তারিখে বাংলার পূর্ব অঞ্চলে সর্বপ্রথমে একত্রিত হলাম। পরিষদের সদস্যবৃন্দ যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সামনে সেদিন আমি আমার সহকর্মীবৃন্দের তরফ থেকে স্বাধীনতা কার্যকরী করার জন্য পরিকল্পনা পেশ করেছিলাম। তখন যোগাযোগহীন অবস্থায় আপনাদের বেশীর ভাগই ছিলেন বাংলাদেশে শত্রর দখলীকৃত এলাকার অভ্যন্তরে। অথচ একটা সরকার গঠন না করলে স্বাধীনতা সংগ্রামকে পরিচালনা করা যাচ্ছিল না। সেইহেতু সেদিনের উপস্থিত বন্ধুদের কাছেই আমরা পরিকল্পনা পেশ করেছিলাম। ১৯৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে আমাদের স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। আর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের আর একটি আম্রকাননে দাঁড়িয়ে আমরা বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ এবং বঙ্গবন্ধুর তরফ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছি। স্বাধীনতা ঘোষণা করেই ১৭ই এপ্রিল সারা পৃথিবীর মানুষকে যা বলেছিলাম, আমরা বিশ্বাস করি তা অন্তরের বাণী। বিশ্বাস করি- ১৭ই এপ্রিলের এই ঘোষণা বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলের মর্মবেদনার এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গের বিরাট বিস্ফোরণ। স্বাধীনতা ঘোষণার পর আমি আমার সহকর্মী জনাব তাজউদ্দিন আহম্মেদকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তাঁর পরামর্শে এবং বঙ্গবন্ধুর পূর্বতম নির্দেশের বলে আমি জনাব খোন্দকার মোস্তাক আহম্মদকে নিযুক্ত করেছিলাম। আমরা জানতাম, আপনারা যে প্রয়োজনে তাঁদেরকে দীর্ঘকাল নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছেন, আমি আপনাদের সবার সঙ্গে পরামর্শ না করেও নিঃসঙ্কোচে আর বিনা দ্বিধায় তাঁদেরকে সরকারের দায়িতু দিতে পারি। তাঁদেরকে দায়িত্ব দেওয়ার পরে তিন মাস চলে গিয়েছে। এই তিন মাস যাবৎ আমি আপনাদের কাছে অকপটে স্বীকার করব- যা করার ছিল অনেক কিছু করা সম্ভবপর হয় নাই। কিন্তু আপনাদেরকে আমি একটি কথা বলব, জনাব তাজউদ্দিন আহম্মদ এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের সৌভাগ্য যে আমাদের সরকারের জন্মমুহূর্ত থেকেই,