পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

480 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড আপনারা জিজ্ঞেস করতে পারেন যে এখন পর্যন্ত এই রাষ্ট্রের এই সরকারের স্বীকৃতি কেন লাভ করা সম্ভবপর হয় নাই? কুটনৈতিক প্রশ্নে বৃহৎ শক্তিবর্গ পৃথিবীতে নিজস্ব স্বার্থের কারণে অনেক কিছু করে। কিন্তু জেনে রাখুন বিশ্বের জনমত আপনার পক্ষে সেখানে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলি আপনাকে স্বীকৃতি দেবেই। আমাদের বন্ধু ও প্রতিবেশী ভারতবর্ষ আমাদের লক্ষ লক্ষ শরনার্থীকে শুধু আশ্রয়ই দেয় নাই আমদের দাবীর বন্ধুরা আমার, মুক্তিসংগ্রামে, স্বাধীনতা সংগ্রামে একদিকে যেমন সৈন্যবাহিনীকে প্রস্তুত করতে হয় চরম আঘাত হানার জন্য, তেমনি আর একদিকে কূটনৈতিক আক্রমণের দ্বারা শত্রকে পর্যুদস্ত করতে হয়। তৃতীয়তঃ দেশের অভ্যন্তরে মানুষের মনোবলকে শক্ত রাখতে হয়। আর শত্রর মনোবল ভাঙ্গতে হয়। বিদেশে কূটনৈতিক প্রচার চালিয়েছেন আপনার সরকার। মুক্তিফৌজকে সুসংগঠিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। হাজার হাজার ছেলে আজ মুক্তিফৌজে যোগ দেওয়ার জন্য, মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসছে। সবাইকে সমানভাবে সৈনিকের শিক্ষা দানের বন্দোবস্ত করা সম্ভব হয় নাই। তার একমাত্র কারণ আমাদের সীমিত সামর্থ। এই সরকারের আয়ের কোনরকম সুনির্দিষ্ট বন্দোবস্ত নেই। শুধুমাত্র দান, খয়রাত, ঋণ আর কিছু বান্ধব মারফত টাকা সংগ্রহ করে কোনমতে সরকার চলছে। তাই যারা মুক্তিযুদ্ধে নাম লেখাবার জন্য ট্রেনিং গ্রহণ করতে বিভিন্ন অঞ্চলে এগিয়ে আসছেন, তাদের সবাইকে ট্রেনিং-এর সুবন্দোবস্ত করা সম্ভবপর হয় নাই। কি করে এই সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে ভাল ট্রেনিং-এর বন্দোবস্ত ও মুক্তিবাহিনীকে আরও জোরদার করা যায় আপনাদের মন্ত্রিসভার সদস্যরা তা আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আমি বিশ্বাস রাখি, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আপনারা গঠনমূলক সমালোচনা দ্বারা ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন। মনে রাখবেন বর্তমান মুহুর্তে যুদ্ধের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্যের। সারা পৃথিবীর মানুষ যেন দেখতে পায় আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুর সহকর্মীরা, বঙ্গবন্ধুর শিষ্যরা, বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়করা এক প্রাণ এক মন হয়ে বাংলার স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। ঐক্যে কোনরকম ফাটল ধরলে তার ফল হবে মারাত্মক। কেউ কেউ বাইরে থেকেও নানা প্রকার প্ররোচনায় আমাদের মধ্যে ফাটল ধরাতে চেষ্টা করতে পারে। সেই সমস্ত প্রচেষ্টাকে আমাদের বানচাল করে দিতে হবে। আমি আপনাদের আশ্বাস দিতে পারি আমার মন্ত্রীসভার সদস্যরা মনেপ্ৰাণে এক। তাদের প্রতিনিয়ত চিন্তা মাতৃভূমির স্বাধীনতাকে কি করে তুরান্বিত করা যায়। যে অটুট ঐক্য আজকে সরকারের মধ্যে বজায় আছে সেই অটুট ঐক্য আজকে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নির্বাচিত সদস্য ও কর্মীদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের প্রধান সেনাপতির বর্তমান রণকৌশল আমাদেরকে গেরিলা যুদ্ধের পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়েছে। এবং গেরিলা যুদ্ধের সবচেয়ে বড় জিনিস হলো জনসাধারণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা। আপনারা যারা প্রতিনিধি, আপনাদের কাছে আমার আকুল আবেদন আমাদের গেরিলা যোদ্ধারা যে রণনীতি আর কৌশলে যুদ্ধ করে চলেছে, এই রণনীতি আর কৌশলে আপনারাই তাদের সর্বাধিক সাহায্য করতে পারেজনগণের মনোবল অটুট রেখে আর সমর্থন বজায় রেখে। বন্দুক নিয়ে যারা লড়াই করছে তারাও যেমন মুক্তিযোদ্ধা, আপনারাও তেমন মুক্তিযোদ্ধা। এটা জনযুদ্ধ, ভাড়াটিয়া সৈন্যদের যুদ্ধ নয়। এটা হচ্ছে People's War-stē People TPS TIEGT Important factor. আর সেই People-কে সংঘবদ্ধ করার দায়িত্ব জনসাধারণের প্রতিনিধিদের প্রতিটি সৈনিককে জনতার বন্ধু ভাবতে হবে। নির্যাতিত, নিপীড়িত ও লাঞ্ছিত বাংলার মানুষ যেন ভাবে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, তাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের কর্মীরা, সৈনিকেরা তাদের বন্ধু। যদি আমরা জনগণের এই সমর্থনকে বজায় রাখতে পারি তাহলে, আমি আপনাদেরকে আশ্বাস দিতে পারি যে, আপনাদের বীর সৈনিকেরা, পৃথিবী যা ভাবছে তার চেয়ে বহু আগে বাঙলার স্বাধীনতা অর্জন করবে।