পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

509 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড সেখানেই জনগণের মধ্যে নূতন উৎসাহ সৃষ্টি করা সম্ভব হইয়াছে, এবং ফলে আরও কিছু রাজনৈতিক গ্রুপ এবং সংগঠন সমন্বয় কমিটির সহিত সংযোগ স্থাপন করিয়াছে। সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে কৃষক-শ্রমিক ও জঙ্গী সমবায়ে গড়িয়া উঠিযাছে ছোট ছোট গেরিলা দল ও গেরিলা এলাকা। এই সকল এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সমন্বয় কমিটি বহির্ভূত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও সমন্বয় কমিটির সহিত ঐক্যবদ্ধভাবে উক্ত প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করিয়াছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কি ঘটিতেছে এবং সমন্বয় কমিটির কাজগুলি কিভাবে চলিতেছে সে সম্পর্কে যাহাদের নূন্যতম ধারণা আছে, তাহরাই জানেন সমন্বয় কমিটির কাজ দেশের অভ্যন্তরে সংগ্রামরত মানুষের ব্যাপক ঐক্যের ক্ষেত্র রচনা করিতেছে। তথাপি যেহেতু সমন্বয় কমিটির বিরুদ্ধে কিছু কিছু ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করা হইতেছে সেইহেতু কতকগুলি প্রশ্নে আমাদের পুনরুক্তি করিতে চাই। প্রথমতঃ সমন্বয় কমিটি কোন জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট নয়। বরং সমন্বয় কমিটির তরফ হইতে জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠনের আহবান জানানো হইয়াছে। সেই ফ্রন্টই হল একটি খাঁটি জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট যাহা ছেট-বড় সকল সংগ্রামী শক্তিকেই সংঘবদ্ধ করিতে পারে। দ্বিতীয়তঃ সমন্বয় কমিটি দেশের অভ্যন্তরে জনগণকে সংগঠিত করিয়া যে গেরিলা বাহিনী গঠন ও গেরিলা যুদ্ধের প্রোগ্রাম উপস্থাপিত করিয়াছে, তাহা কোনক্রমেই বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী নয়। আমাদের ১লা জুনের ঘোষণায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, “এই গেরিলা যুদ্ধ পরিচালত হইবে বাংলাদেশের মুক্তিফৌজের সহিত যোগাযোগ রক্ষা ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে।” তৃতীয়তঃ এই সমন্বয় কমিটি আওয়ামী লীগ বা অন্য কোন রাজনৈতিক শক্তির বিরোধী কোন শক্তি নয়। সমন্বয় কমিটির ঘোষণায় প্রতিটি ছত্রে ইহার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করিতে পারিলেই বিজয়কে সুনিশ্চিত করা যায়। তাই জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা সর্বপ্রকার দলীয় সংকীর্ণতা পরিহার করিবার জন্য সকলের নিকট উদাত্ত আহবান জানাইতেছি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন প্রকার দলীয় সংকীর্ণ মনোবৃত্তি খুনী ইয়াহিয়ার হাতকেই শক্তিশালী করিবে। আমাদের তাই শ্লোগান- ঐক্য, একমাত্র ঐক্য, বাংলাদেশের মহান জনতার ব্যাপক সংগ্রামী ঐক্যই বিজয়ের চাবিকাঠি। এই ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সহিত কাজ করিয়া যাইতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু আমরা মনে করি, অনুরূপভাবে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য স্বাধীনতাকামী দলগুলিকে আগাইয়া আসিতে হইবে। প্রসঙ্গক্রমে আমরা আরও একটি বিষয় সম্পর্কে আমাদের মতামত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করিতে চাই। চাই যে, ভারতের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির সাথে আমরা কোনভাবেই সম্পর্কিত নই এবং সম্পর্কিত হইতেও চাই না। আমরা চাই, ভারত সরকার, ভারতের জনগণ ও ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ পৃথিবীর সকল স্বাধীনতাকামী গণতান্ত্রিক শক্তিই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের সংগ্রামে আমদের সর্বপ্রকার সাহায্য করুক। যে-কোন মহল হইতে এই ধরনের যে-কোন শর্তহীন সাহায্যে আমরা কৃতজ্ঞতা সহকারে গ্রহণ করিব।