পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

565 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড (৯) রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে ভারী ও মূল শিল্প গড়িয়া তোলা, শিল্পের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকে প্রদান নির্ধারিত শক্তি হিসাবে গড়িয়া তোলা, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ইত্যাদির উপর গণপ্রতিনিধিমূলক আইনসভার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসমূহ পরিচালনার ক্ষেত্রে সেইসব শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে শিল্প গঠনের মূলধন সংগ্রহ ও অর্থনীতির উপর হইতে একচেটিয়া পুঁজিপতিদের কর্তৃত্ব বিলোপের জন্য ব্যাঙ্ক, বীমা, পাটশিল্প ও ব্যবসা, দদেশিক বাণিজ্য, এবং প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা। যাহারা মুক্তি সংগ্রামে সহযোগিতা করিয়াছেন, তাহদের শিল্প, বাণিজ্য, ব্যাঙ্ক-বীমা জাতীয়করণ করা হলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া। মালিকদের উৎসাহ প্রদান ও তাহদের সুযোগ-সুবিধা দান। সমাজব্যবস্থা নির্বিশেষে সকল দেশের সাথে সমতার ভিত্তিতে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করা এবং সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সাথে বাণিজ্যিকও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করা। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি বিশেষতঃ ভারতের সহিত ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করা। (১০) (ক) ভূমি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আশু প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন। জমির সিলিং পরিবার প্রতি ১০০ বিঘায় নির্ধারিত করা এবং উদ্ধৃত্ত জমি গরীব ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তি বিতরণ করা। যেসব ভূ-স্বামীর ভূমি সরকারী আয়ত্তে নেওয়া হইবে, তাহদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া। সরকারের খাস জমি ভূমিহীন ও গরীব কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা। (খ) ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকদের খাজনা হইতে রেহাই দেওয়া। ক্রমে খাজনা প্রথা তুলিয়া অনুসরণ করা। (গ) পাট ও অন্যান্য অর্থকরী ফসলের ন্যায্যমূল্যে নিশ্চিত করা। (ঘ) ক্ষেতমজুরদের জন্য যোগ্য মজুরী নিশ্চিত করা। (ঙ) কৃষকদিগকে সমবায় চাষে উৎসাহিত করা, রাষ্ট্র হইতে কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতি, সার নামমাত্র সুদে কৃষিঋণ প্রভৃতি দ্বারা কৃষকদিগকে সাহায্য কর। (১১) বন্যা, জলোচ্ছাস নিরোধ এবং সেচ ব্যবস্থার কাজকে রাষ্ট্র হইতে জরুরী কর্তব্য হিসাবে গ্রহণ করা এবং ঐগুলির জন্য রাষ্ট্র হইতে যথাযোগ্য ব্যবস্থা অবলম্বন করা। (১২) অবৈতনিক সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা, কম খরচে সকল প্রকার উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা, বহুসংখ্যক বিদ্যালয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার, ডাক্তারী, কৃষি ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতঃ আধুনিক বৈজ্ঞানিক পন্থায় ও ধর্মনিরপেক্ষভাবে শিক্ষাদানের প্রস্তাব গ্রহণ। বাংলাদেশে শিক্ষার সকলস্তরে বাংলা ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা এবং বাংলা ভাষার বিকাশের জন্য রাষ্ট্র হইতে সকল প্রকার সাহয্যদান। বাংলাদেশে বসবাসকারী উর্দু ভাষাভাষীদের নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ ও নিজেদের সাংস্কৃতিক জীবন গড়িয়া তোলার অধিকার দান। (১৩) জনগণের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজকে যথোচিত গুরুত্ব দিয়া উহার জন্য রাষ্ট্র হইতে বেশী করিয়া অর্থ ব্যয় করা এবং চিকিৎসার সুযোগ জনগণের জন্য সহজলভ্য করিয়া তোলা। (১৪) শ্রমিকদের জীবন-ধারণের উপযোগী নিম্নতম মজুরি, চাকুরীর স্থায়িত্ব, দৈনিক উর্ধ্বে ৮ ঘণ্টা কাজ, ভবিষ্যতের নিরাপত্তা, ধর্মঘট এবং যৌথ দরকষাকষির অধিকার সহ সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা |