পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৬০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

575 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অবস্থাত্তT_বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার ভূমিকা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন সংঘের প্রচার পুস্তিকা ২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর রক্তঝরা দিনগুলোতে -শ্রীবিশুদ্ধানন্দ মহাথের সভাপতি, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ ও বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘ ১লা জানুয়ারী, ১৯৭২ইং মুখবন্ধ গিরিরাজ হিমালয়ের হিমবাহু বন্ধন থেকে পলাতকা গঙ্গা-ব্ৰক্ষপুত্রের মহামিলনে ঘটেছিল কোন এক মহালগ্নে। তাদের এ সঙ্গম শ্রান্তি ও ক্লেদ মহাসাগরের নীল মহাস্নানে ধুয়েমুছে নেওয়ার ক্ষণেই মহাসাগরের বুকে ভেসে উঠেছিল বিশ্বেও অদ্বিতীয় কৃষিভূমি, আমাদের এই দেশ। এই সোনার বাংলা। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এ দেশ শত শতাব্দীর মহানিদ্রা ঘোর ছেড়ে বৌদ্ধ পালযুগের বৌদ্ধ বাংলাই গর্ব সমুন্নত শিরে হয়ে দাঁড়িয়েছিল, -সিংহল, সুমাত্রা-জাভা, সুবর্ণভূমি ও সুবর্ণদ্বফিবাসীর মহাতীর্থ ক্ষেত্র এবং এটা ইতিহাসের স্বাক্ষ্য। বৌদ্ধ বাংলার চরম বেদনাকর বিয়োগান্ত পরিণতির ধারা বেয়ে দাসত্বের জিঞ্জিরের নির্মম লৌহ নিষ্পেষণে জর্জরিত মুমূর্ষ বাংলা ও বাঙালীর ধর্ম, সভ্যতা, ভাব-ভাষা-সংস্কৃতি ও কৃষ্টি পুনরুজ্জীবনের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ শুরু হয় ১৯০৫-১৯০৬ সালে বঙ্গ-ভঙ্গাআন্দোলনের অবয়বের বুকে স্বাধীনতার স্বপ্ন-সাধ নিয়ে। বিপ্লবী-বাংলার মন ও মানসের সীমাহীন দ্যোতনা ভাঙ্গার পূজারী বেশে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন ও নেতাজী সুভাষের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পূর্ণ পরিণতির পথে বেগবতী হয়ে উঠেছিল বটে, কিন্তু অবাঙ্গালীর দল বিদেশী, বিজাতি বিধর্মী বেনিয়ার অনুকম্পা আশীষ ও সক্রিয় সহযোগিতাপুষ্ট হয়ে বাংলায় স্বপ্নসাধের ভ্রণাবয়বকেই করে দিয়েছিল শ্বাসরুদ্ধ। অস্থিচর্মসার নাভিশ্বাসগ্রস্ত বাংলার সাড়ে সাত কোটি বাঙালী হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সন্তানদল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বজ্ৰকণ্ঠের আহবানে ভাঙার পূজারীর বেশে মৃত্যুঞ্জয়ী সংকল্প গ্রহণ করলে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের গভীর নিশিথে বাংলার প্রাণকেন্দ্র ঢাকায় নিদ্রায় মগ্ন শত শত বাঙালীর জীবনে নেমে আসে চিরনিদ্রা। শুরু হয় উন্মুক্ত তরবারি হাতে অত্যাচারীর উন্মাদ নর্তন-কুর্দন। শুধু শহর-বন্দরে নয়, গ্রামবাংলার হাজার হাজার পল্লীর হাটে-ঘাটে-মাঠে চলতে থাকে হত্যা, লুণ্ঠন, নারী হরণ ও ধর্ষণের কালো বিভীষিকা। সবুজ বাংলার অফুরন্ত শ্যামলিমা হয়ে ওঠে মুক্তিপাগল অবুঝ বাঙালীর তাজা খুনে লালে লাল। বৌদ্ধ জম্বুদ্বীপের হতাবশিষ্ট মুষ্টিমেয় বাঙালী বৌদ্ধ সন্তানদলও অত্যাচারীর উদ্যত-কৃপাণের কবল থেকে রক্ষা পায়নি। এর চরম সংকট মুহুর্তে ঢাকার কমলাপুর বৌদ্ধবিহারের শ্রদ্ধেয় শ্রীবিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবিরের প্রাণও কেধে উঠেছিল মৃত্যু-মুখোমুখী অসহায় মানুষের জন্য। বলতে দ্বিধাবোধ করব না, কমলাপুর বৌদ্ধবিহার রূপ মধুচক্রের চারিদিকে মধুলোভীদের যেসব চাই সর্বাধিক গুঞ্জন তুলতো, দেশের এ মৃত্যুসঙ্কটক্ষণে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের টিকির সন্ধানও। এ গভীর বিয়োগান্তক্ষণেও কর্মবীর বিশুদ্ধানন্দ ভেঙে নুইয়ে না পড়ে চরম পিচ্ছিল পথে দৃঢ় পদক্ষেপে যে যাত্রা শুরু করেছিলাম রক্তঝরা-সহযোগিতার জন্য তিনি আমার প্রতি যে ভাব ও মন নিয়ে মৈত্রীর হস্ত প্রসারিত করেছিলেন তা গ্রহণ করেছি অতীতের সব দুঃখবেদনাকে দুঃস্বপ্নের ছায়ার ন্যায়