পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৬২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

590 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন থাকা সত্ত্বেও আমরা বিরামহীন সমাজের সেবা করেছি, কিন্তু তার বিনিময়ে শুনেছি পুলিশ জুলুম চলবে না’ পুলিশ গোষ্ঠী নিপাত যাক’ শ্লোগান। কিন্তু কেন, কন এই বিড়ম্বনা, এর জন্য দায়ী কারা- সমাজ, না রাষ্ট্রব্যবস্থা? এ বিচার কি কেউ কোনদিন করেছিল? করেনি। তাই আমাদের এ বিপ্লব পাক জংগীশাহীর বিরুদ্ধে আমাদের বিক্ষোভ বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে আমরা একার- আর পূর্ণ সহযোগী। আজকে সমাজ-মানুষের চিন্তাধারায় পরিবর্তন হয়েছে। আমরা বাঙ্গালী, মানুষ। সরকারী কর্মচারী হলেও খাকী পোশাকের অন্তরালে আমাদেরও একটি সবুজ মন ঘুমিয়ে আছে, তাকে জাগিয়ে দিতে অনেক সফল সম্ভাবনা আছে বলেই অসহযোগ আন্দোলনের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু দেশের আভ্যন্তরীণ আইন-শৃংখলার ভার পুলিশের উপরই ন্যস্ত করেছিলেন। সেই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা পূর্ব বাংলার প্রায় পয়তাল্লিশ হাজার পুলিশের কর্মচারী এ আন্দোলনে পাক জংগীশাহীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছি। বঙ্গবন্ধু আমাদের যে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, আমরা সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে চেষ্টা করেছি- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সে কাহিনী চিরদিন স্বর্ণীক্ষরে লিখিত হবে। (এ ব্যাপারে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা শীর্ষক প্রবন্ধযা দৈনিক যুগান্তরের গত পনেরোই অক্টোবর সংখ্যায় প্রকাশিত- প্রণিধানযোগ্য। আজ বাংলাদেশ স্বাধীন ও গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্ররূপে স্বীকৃত। আমরা পুলিশ কর্মচারী, অতীতের দুঃখ-দৈন্য ভুলে গিয়ে জনগণের সাথে একাত্ম হয়ে দেশ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করার দৃঢ়সংকল্প গ্রহণ করবো। ইংরেজ আমালের শোষণরূপ আইন যন্ত্রকে পালটে নিয়ে জনগণের একত্মতাই হবে আমাদের কাম্য। আমরা হবো প্রকৃতই জনগণের বন্ধু আর সেবক এবং সেই ভাবধারার পরিপ্রেক্ষিতেই রচিত হতে হবে আমাদের শাসন ব্যবস্থা। আমাদের দিয়েই হবে তার সার্থক রূপায়ন। এ আশা নিয়েই আমাদের অতীত ধ্যান-ধারণার পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয়। পশ্চিমবংগ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের বিভিন্ন স্থানে। আরও অসংখ্য পুলিশ কর্মচারী রয়েছেন পাক অধিকৃত এলাকায়। আমরা আজ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-পুত, ছেলে-মেয়েদের সাথে সম্পর্কচ্যুত, তবুও আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষ সংগ্রামমুখর- অতীতকে ভুলে গিয়ে আমরা অনাগত ভবিষ্যতের সফল সংগ্রামে নিয়োজিত। চলমান জীবনে যে-কোন কাজে সংগঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের অগণিত পুলিশ কর্মচারীরা আজও ছড়িয়ে আছে অধিকৃত এলাকায় এবং ভারতের বিভিন্ন স্থানে। ওদের অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-দৈণ্য অবর্ণনীয়- এ জন্যে আমরা বিশেষ করে বাংলাদেশের নিম্নপদস্থ পুলিশ কর্মচারীরা আমাদের ভাইদের দুঃখকষ্ট অভাব-অভিযোগের সাথে একাত্ম হতে চাই। আর তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার জন্য দরকার একটি সহায়ক ংস্থা। বাংলাদেশের নিম্নপদস্থ পুলিশ কর্মচারীদের দৈনন্দিন অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-দৈন্য মোচনের জন্য একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আর এজন্যই আমরা একটি সংস্থার অভাব উপলব্ধি করছি- আশা করি এ ব্যাপারে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিত অবশ্যই পাবো। এ ব্যাপারে আপনাদের পক্ষে আমি বাংলাদেশের পুলিশ প্রধানের অনুমতি চেয়ে আবেদন পেশ করেছি নিয়ম-শৃংখলা ও আইনানুগভাবে আমরা আমাদের অভাব-অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে পেশ করার দৃঢ়সংকল্প নিয়েই আমরা আমাদের লক্ষ্য পথে এগিয়ে যাবো- আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতাই আমাদের কাম্য। জয় বাংলা। বাংলাদেশ নিম্নপদস্থ পুলিশ কর্মচারীদের পক্ষে(স্বাক্ষর) এ, কে, মকবুল আহমদ (প্রাক্তন) ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মচারী, মেহেরপুর থানা, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ।