পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/১০০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

969 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড ভারতীয় বিমান বাহিনী এদিনও খুলনা, দৌলতপুর, গোকুল, খাসনামা, জয়দেবপুর ও ময়নামতির ওপর প্রচন্ড আক্রমণ চালিয়েছে। খুলনা, গোয়ালন্দঘাট, আড়িয়াধাট ও সিরাজগঞ্জে শত্রসেনারা লঞ্চে, নৌকাযোগে আক্রমণ করতে উদ্যোগী হয়েছিল। তবে তারা ব্যর্থ হয়েছে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাফল্যজনক আক্রমণের ফলে স্থল বাহিনীর অগ্রগতি অব্যাহত আছে বলে এখানে মনে করা হচ্ছে। ঢাকার দিকে পূর্বাঞ্চল কম্যান্ডের একজন মুখপাত্র কলকাতায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেছেন: ভৈরব বাজারের দিক থেকে ভারতীয় জোয়ানেরা নির্দিষ্ট পথে ঢাকার দিকে এগিয়ে চলছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে খবর হচ্ছে ঢাকায় পাক সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশেষ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তাদের প্রধান জেনারেল নিয়াজি ও ফরমান আলির মধ্যে বিশেষ মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। একজন এই প্রচন্ড চাপের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলছেন। অপরজন তা অস্বীকার করছেন। তিন দিক থেকেই ভারতীয় সেনারা যে এগিয়ে চলেছেন, তা ঐ মুখপাত্র এদিন স্বীকার করেছেন। বিমান থেকে যে সকল ছত্রী ভারতীয় সৈন্যকে গত দুদিনে ঢাকার উপকণ্ঠে নামানো হয়েছিল, তারাও আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা ঢাকা শহরের মধ্যে প্রবেশ করেছেন বলে জানা গেছে। শক্রসেনা রক্ষাব্যুহ উক্ত মুখমাত্র মনে করেন, পাক সেনারা ঢাকায় রক্ষাব্যুহ আরো সুদৃঢ় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, ভারতীয় জোয়ানরা সব অবস্থায় মোকাবিলা করতে প্রস্ত্তত। আরো জানা গেছে, পাক সেনাদের হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশী। ইতোমধ্যে ৪১০২ জন পাক সেনাকে বন্দী করা হয়েছে এবং ৪০৬৬ জন তাদের প্যারা মিলিটারী সৈন্যও ধরা পড়েছে। বন্দী শক্রসেনাপতি কালিয়াকৈরে যে নয়জন পাক সেনাপতিকে বন্দী করা হয়েছে, তার মধ্যে আছেনঃ ৯৩নং ব্রিগেডের কম্যান্ডার খাদির খান, সিভিল আর্মড ফোর্সের সেক্টর কম্যান্ডার লেঃ কর্নেল মোহাম্মদ আকবর, ময়মনসিংহএর মার্শাল ল’ এ্যাডমিনিষ্ট্রেটর লেঃ কর্নেল আমির মোহাম্মদ খান, ৯৩নং ব্রিগেডের মেজর মোহাম্মদ আকবর, রেঞ্জার্সের উইং কম্যান্ডার মেজর আসগর, মেজর আলধর, মেজর মসজিদ, বসির আহমেদ এবং ৯৩নং ব্রিগেডের ৩ নম্বর গ্রেডের জি এস এ ক্যাপ্টেন আনজাম। ঢাকার দিকে ময়মনিসংহের পথ ধরে ভারতীয় জোয়ানদের যে দলটি এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের চলার পথে বিশেষ বড় কোন নদীর বাধা নেই বলে সামরিক বাহিনীর একজন অফিসার জানান। আর নরসিংদীর দিক থেকে যে দলটি রয়েছেন তা ঢাকা শহর থেকে প্রায় এগার মাইল দূরে। উত্তর ও পূর্বদিক থেকে বাংলাদেশের রাজধানী অভিমুখে ধাবিত ভারতীয় বাহিনী অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক গতিতে এগুচ্ছে বলে ধরা হয়েছে। কারণ টাংগাইল-এ ভারতীয় জোয়ান ও মুক্তিবাহিনীর সমবেত শক্তি কুমীটোলার ক্যান্টনমেন্টের চার পাঁচ মাইলের মধ্যে পৌঁছেছে। আরো নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পাক জঙ্গী শাসকদের প্রধানরা তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করে রেডক্রসের কাছে নিরপেক্ষ অঞ্চলে আশ্রয় চেয়েছেন; লেঃ জেনারেল নিয়াজি ঢাকা ধ্বংস হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইছেন। প্রকাশ, শুধু গোলন্দাজ বাহিনী নয়, ভারতীয় বিমান বাহিনী পর্যন্ত ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের উপর বিকেলের দিকে বোমা বর্ষণ করেছেন। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আরো জানিয়েছেনঃ স্থল বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল মানেকশার বাণী সম্বলিত প্রচারপত্র বিমান থেকে গতকাল রাতে ঢাকা শহরে ফেলা হয়েছে। উক্ত মুখপাত্র আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন : অসামরিক লোকজনদের এলাকায় যাতে সংঘর্ষ না হয়, তার জন্য বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। তবে,