পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৭৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

754 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড


سمه

শিরোনাম সূত্র তারিখ محمي ২৯৫। একটি নির্ভীক কণ্ঠ কালান্তর ২৪ মে, ১৯৭১ একটি নির্ভীক কণ্ঠ এবার একটি নির্ভীক কণ্ঠ সোচ্চার। শেখ মুজিবরই পাকিস্তানের অখন্ডতার শত্রইয়াহিয়া খান ও তাঁর জঙ্গী চক্রের এই অপপ্রচার ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন স্পষ্টবক্তা বাদশা খান। তিনি বলেছেন, মুজিব সাহেব পাকিস্তান ধ্বংস করতে চান নি, পাকিস্তান যদি ধ্বংস হয়ে থাকে তবে তার জন্য দায়ী পাকিস্তানের পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো ও মুসলিম লীগ নেতা কাইয়ুম। বাঙালীরা খাঁটি মুসলমান নয়- এমন প্রচার করতেও শয়তানরা ছাড়েনি। তার জবাবে বাদশা খান বলছেন, বাঙালীরা খাঁটি মুসলমান এবং পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য অন্য যে কারো চাইতে তাদের বেশী। দেশ ভাগের আগে একমাত্র বাংলাদেশেই মুসলিম লীগ সরকারের অস্তিত্ব ছিল-বেলুচিস্তান, সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু বা পাঞ্জাবে তা ছিল না। বাঙালীদের চেষ্টায়ই পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে। অতএব পাকিস্তানের প্রতি বাঙালীদের আনুগত্য ছিল না, একথা অবিশ্বাস্য। বাদশা খানও সেই একই প্রশ্ন তুলেছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ থেকে বিছিন্ন হতে চাইবে কেন? বাঙালীরা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে দাবিয়ে রাখার জন্যই সামরিক আইন জারি করে বাংলাদেশে ট্যাঙ্ক, মেশিনগান ও বোমা চালিয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। এটা পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার পথ নয়। আসলে পাঞ্জাবের পুঁজিপতি গোষ্ঠী ও সামরিক প্রভুদের ক্ষমতা কায়েম রাখার জন্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের উপর এই বলপ্রয়োগ। বাদশা খান তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভাষায় বলেছেন, হতভাগ্য বাঙালীদের একমাত্র অপরাধ যে, তাঁরা নির্বাচনের মাধ্যমে গোটা পাকিস্তানের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। আওয়ামী লীগের ছয় দফা দাবিকেই যদি ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের সর্বনাশের কারণ বলে মনে করেন তবে সেই ছয় দফা দাবির বিরোধিতা গোড়া থেকেই তিনি করলেন না কেন? প্রায় এক বছর ধরে এই ছয় দফা দাবিতে আওয়ামী লীগ প্রচার এবং সেই দাবির ভিত্তিতেই সে নির্বাচনে জয়ী হয়। বাদশা খান প্রশ্ন করেন, তখন তা বন্ধ করে দেবার কথা সামরিক রাষ্ট্রপতির মাথায় ঢোকেনি কেন? বাংলাদেশে গিয়ে তিনি কেনই বা বললেন যে, শেখ মুজিবুর রহমানই পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী? মুসলিম লীগ নেতা কাইয়ুম সাহেবও তো বলছিলেন, ছয় দফা দাবি পূর্ণ পাকিস্তানের পক্ষে প্রযোজ্য। ভুট্টো সাহেবও তো আওয়ামী লীগের ছয় দফার মধ্যে পাঁচ দফা দাবি মেনে নিয়েছিলেন। তথাপি সব কেঁচে গভূষ হয়ে গেল কেন? বাদশা খান নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এর উত্তর দিয়েছেন। জিয়ার আমলে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে অনুরূপ জুলুম হয়েছিল। পাকিস্তানের সবে জন্ম হয়েছে। সীমান্ত প্রদেশের বিধানসভায় তখন ছিল বাদশা খানের দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা। পঞ্চাশ জন সদস্যের মধ্যে তেত্রিশ জনই ছিলেন তাঁর দলের। জিন্না সাহেব জোর করে সেই দলের মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে সংখ্যালঘু দলকে মন্ত্রিসভা গঠন করতে ডাকলেন। কেবল তাই নয়, বান্ন যাবার পথে বাদশা খানকে গ্রেপ্তার করা হল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইপির ফকিরকে দেবার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আরো রটিয়ে দেওয়া হল, পাকিস্তানকে তিনি বালির ঢিপি এবং এক লাথিতে তিনি তা উড়িয়ে দেবেন। প্রচার চলল, বাদশা খান বিশ্বাসঘাতক ও হিন্দুদের দালাল। সঙ্গে সঙ্গে বহু লোককে গ্রেপ্তার করা হল। এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করতে ও নামাজ পড়তে জুম্মাবারে যারা বারবারায় এসে জমায়েত হল তাদের উপর চলল বোমা ও মেশিনগান। শত শত নরনারী ও শিশু প্রাণ হারাল। তারপর সারা প্রদেশে চলল লুণ্ঠন, মারপিট ও নানাবিধ লাঞ্ছনা। হাজার হাজার খোদাই খিদমতগারকে (বাদশা খানের অনুগামী) ধরে জেলে বন্দী করা হল। জিন্নার পুতুল সরকার খোদাই খিদমতগার আন্দোলন ও তার মুখপত্র “পুশতুন’ নিষিদ্ধ করে দিল।