পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

770 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড থাকতে পারবে না। এ অবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তান চূড়ান্ত পর্যায়ে ধসে যাবে। অথবা এমনও হতে পারে যে, ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান যুদ্ধ ঘোষণা নাও করতে পারে। বর্তমানে পশ্চিম পাকিস্তানে যে উন্মোদনা দেখা দিয়েছে, তাতে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্য গণতান্ত্রিক নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধিদের হাতেই পূর্ব বাংলাকে সমর্পণ করে যুদ্ধে পরাজয় বরণের মত দূরদর্শিতা বিজ্ঞতা পশ্চিম পাকিস্তানের জঙ্গী শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে নাও থাকতে পারে। শত্ৰপক্ষকে পিছন থেকে ব্যতিব্যস্ত করে শেষ করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে গেরিলা দল সংগঠন করতে বলা হয়েছে। এ অনেকটা লম্বা-চওড়া নির্দেশ দেওয়ার মত ব্যাপার। এমনকি যদি তারা শেষ পর্যন্ত এরকম স্থায়ী শক্তি সংগঠন করতেও পারেন, তবুও ঐ শক্তিকে নির্দিষ্টরূপে দিতে কয়েক বছর কেটে যাবে। আর চীন ও রাশিয়া কারুর মতামতের অপেক্ষা না করে ভিয়েতনামকে যেমনভাবে বিপুল পরিমাণ সাহায্য দিয়েছিল এবং আজও দিচ্ছে, ঠিক তেমনভাবে যে কোন অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তত থেকে যদি ভারত বিপুল পরিমাণ সাহায্য দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ না হয়, তাহলে এ ধরনের গেরিলা শক্তির নেতৃত্ব ভারতের পক্ষে খুব সহায়ক হবে না। তাছাড়া, মুক্তিফৌজকে অত গোপনে ঐভাবে বিপুল পরিমাণ সাহায্য দেওয়া যাবে না। মুক্তিফৌজকে বিপুল পরিমাণ সাহায্য দেওয়ার জন্যও ভারতকে অবশ্যই সর্বপ্রথমে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে হবে। উপরন্তু ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে নিজেদের সম্পর্কে এবং বাংলাদেশ সরকার সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসের ভাব বজায় থাকবে না। বাংলাদেশের জনগণকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত করার আগে তাদের নৈতিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে শক্তিমান করে দিতে হবে। নৈতিক মানদন্ডহীন জাতিকে যতই অস্ত্র দেওয়া হোক না কেন, কোনদিনই ঐ জাতি অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না। ভারতের মতো উপমহাদেশে নেতা হবেন সুমহান, আর তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার মধ্যে থাকবে যুগপৎ দূরদৃষ্টি ও শক্তি। এই দেশকে শাসনের ভার ক্ষুদে শ্রেণীর রাজনৈতিকদের হাতে দেওয়া যায় না। মহান দেশরূপে যদি ভারত পরিগণিত হয়, তাহলে তাকে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী দায়িত্বভার বহন করতেই হবে। এ বিষয়ে ইতস্তত করলে চলবে না। এই জাতিকে তার লক্ষ্যে পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য সুমহান কাজও সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞার প্রয়োজন। কেবলমাত্র সুমহান কাজ ও সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞই সমগ্র জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তাহলেই এ দেশ এক বিরাট শক্তিতে পরিণত হবে এবং সকলের সম্মানের পাত্র ও শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে দাঁড়াবে। ভারতের সামনে যে দায়িত্ব উপস্থিত, তা যদি সে এড়িয়ে যেতে চায়, তাহলে তার ধ্বংস অনিবার্য ও নিশ্চিত। সম্পাদকীয়, কম্পাস : ২৯শে মে, ১৯৭১