পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

790 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩১৩৷ স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিন যুগান্তর ৫ জুন, ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিন আজ শনিবার পাঁচই জুন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আসবেন কলকাতায়। কি দেখবেন তিনি? সীমান্তে নেই তিল ধারণের স্থান। উপকণ্ঠে এসে পৌছেছে শরণার্থীর ঢেউ। পাক লুটেরা রাস্তায় কেড়ে নিয়েছে তাদের সর্বস্ব। প্রাণে মরেছে অনেকে। নিখোঁজ হয়েছে স্ত্রী-কন্যা। এপারে এসেও স্বস্তি নেই। মহামারীরূপে দেখা দিয়েছে কলেরা। রাজ্য সরকার দিশাহারা। শরণার্থীর সংখ্যা চার লক্ষ ছাপিয়ে উঠেছে। অন্যান্য রাজ্যে না পাঠালে বাঁচবে না এই হতভাগ্যের দল। দু’মাস অপেক্ষা করেছেন কেন্দ্রীয় সরকার। কি পেয়েছেন তাঁরা? বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির চরম ঔদাসীন্য এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের অসহনীয় নীরবতা। ইয়াহিয়া আগের চেয়ে বেশী বেপরোয়া। বাংলাদেশে জুলাচ্ছেন তিনি সাম্প্রদায়িকতার আগুন পুড়ছে অনেকে। যারা কোনমতে বেঁচেছে তারা আশ্রয় নিচ্ছে ভারতে। যত দিন যাবে শরণার্থীর সংখ্যা তত বাড়বে। ওদের ফেরার পথ বন্ধ। বন্দুক উচিয়ে আছে ইয়াহিয়ার বাহিনী। তাদের ইন্ধন জোগাচ্ছে স্থানীয় ধর্মান্ধের দল। গোড়ার দিকে বাংলাদেশ সরকারকে যদি স্বীকৃতি দিতেন নয়াদিল্লী তবে ঘটত না অবস্থার এমনিতর অবনতি মুক্তিযোদ্ধারা পেতেন দ্বিগুণ মানসিক বল। বাড়ত সংগ্রামের তীব্রতা। গ্রামাঞ্চলে গড়ে উঠত প্রতিরোধ ব্যুহ সাম্প্রদায়িক নেতাদের মধ্যে দেখা দিত সন্ত্রাস। কমত লুটপাটের ব্যাপকতা বিপুল সংখ্যায় শরণার্থীরা হয়তো ভিড় করত না ভারতের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে। কেন্দ্রীয় সরকারের “দেখি কি হয় নীতি” এনেছে নৈরাশ্য। বাড়িয়েছে ইয়াহিয়ার স্পর্ধা এবং ভারতকে নিয়েছে আর্থিক সঙ্কটের মুখে। বন্ধ হবে না শরণার্থীর স্রোত। পূর্ব বাংলায় থাকতে পারবে না অসাম্প্রদায়িক সাধারণ মানুষ। কিসের আশায় দিন গুনছেন প্রধানমন্ত্রী? বৃহৎ শক্তিগুলো কি লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর হাত ধরে তাদের নিজেদের বাড়ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসবে? তারা কি এদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেবে? আর্থিক চাপে ইয়াহিয়ার নাকে খত আদায় করবে? গত দুমাসের আমতর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি কি বুঝতে পারেননি জল কোথায় গড়াচ্ছে? জিইয়ে রাখবে তারা ইসলামাবাদকে। শক্তিসাম্য ভাঙতে দেবে না এশিয়ার এ অঞ্চলে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশ বাস্তব অখন্ড পাকিস্থানের অপমৃত্যু ঘটেছে। পূর্ব এবং পশ্চিমের বোঝাপড়া অসম্ভব। স্বাধীন বাংলাদেশ ছাড়া শরণার্থীরা ফিরতে পারবে না নিজেদের বাড়ঘরে। এই সহজ সত্য মেনে নিতে কর্তৃপক্ষের দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাবই সৃষ্টি করছে যত জটিলতা। শ্রীমতি গান্ধী আশায় আশায় অনর্থক সময় কাটাচ্ছেন। এখন যে অবস্থা চলছে তার ব্যতিক্রম না ঘটলে ছ মাস কেন ছ বছরেও শরণার্থীরা ছাড়বে না ভারতের মাটি। পূর্ব বাংলায় শক্তি সংহত করবেন ইসলামাবাদ। মুক্তিসংগ্রামীরা পাবেন প্রচন্ড বাধ। আর ক্রমবর্ধমান শরণার্থীর বোঝা নিয়ে ভারত খাবে হাবুডুবু। সমূহ বিপদ সামনে দেখেও মন স্থির করতে পারছেন না কেন্দ্রীয় সরকার। গোটা জাতিকে কোন অন্ধকার গুহায় টেনে নিচ্ছেন তারা? বিভিন্ন রাজ্যে শরণার্থীদের অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়া খুবই দরকার- সন্দেহ নেই। এ ব্যবস্থা অবশ্যই সাময়িক। তাতে পাওয়া যাবে না সমস্যার স্থায়ী সামাধান। গোঁজামিল দিয়ে সয় কাটাবার পালার শেষ হয়েছে। দেশবাসীর ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। জবাব দিন নয়াদিল্লী- শরণার্থীদের নিয়ে তাঁরা কি করবেন? কি করে থামাবেন বন্যার স্রোত? কিভাবে পাঠাবেন তাঁদের বাংলাদেশে? বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির কাছে নয়াদিল্লীর আকুতিমিনতি ব্যর্থ। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত পত্রে এবং কূটনৈতিক তৎপরতায় যাদের টনক নড়েনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরণ সিংয়ের সম্ভাব্য সফরে তাদের ঘুমের নেশা কাটবে না। লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে বুকে ধরে অনন্তকাল বসে থাকতে পারে না ভারত। নিরাপত্তা এবং বাঁচার তাগিদেই কেন্দ্রীয় সরকারকে নিতে হবে নিজস্ব পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার