পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩২০। অনাহারে পথশ্রমে অবসন্ন মৃতপ্রায় শরণার্থী | আনন্দবাজার পত্রিকা ৮ জুন, ১৯৭১ দল (বিশেষ প্রতিনিধি) - স্যার, একবার বলে দিন, এই স্লিপ নিয়ে কোথায় গেলে রেশন পাব? কিশোর এবং শিশু এই একটি প্রশ্ন মুখে নিয়ে পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন শিবিরে এরা যাচ্ছে, প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে, আবার হাটছে, হাটছে মাইলের পর মাইল, হাঁটছে দিন রাত। তারপর অনাহারে পথশ্ৰম, যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল, অবসন্ন তারা বসে পড়ছে পথের ধারে। মরছে। কলকাতার প্রবেশদ্বারেই, সাহারা আশ্রয় শিবিরের সামনে অস্থিচর্মসার এক বৃদ্ধ একটি ভাঙ্গা বাড়ির হাড় পাঁজর বের করা দেওয়ালে হেলান দিয়ে নিম্পলক চেয়ে আছেন আশ্রয় শিবিরের দিকে। না, এখন তার কোনও চাহিদা নেই, কারণ তিনি মৃত। রবিবার কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের কয়েকজন চিকিৎসক ডেকে আমাকে দৃশ্যটা দেখালেন। জানা গেল, ওই বৃদ্ধার পদযাত্রা শরু হয়েছিল খুলনার এক গ্রাম থেকে, আর যাত্রা শেষ হল এই সাহারায়, কলকাতার দ্বারপ্রান্তে। এ দৃশ্য আজ পশ্চিমবঙ্গের কোথায় নয়? এরা, এই আর্ত, ক্ষুধিত, সাজানো সংসার থেকে উন্মলিত লোকগুলো এইরকম দিশাহীন ঘুরছে কেন? মাড়োয়ারি রিলিফ সোসাইটির একজন মুখপাত্র বললেন, কী করব? আমাদের শিবিরগুলোর আর কাউকে আশ্রয় দেবার সামর্থ্য নেই। আমরা তাই নতুন লোককে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি। আবার ঠিক কোথায় পাঠালে যে ওরা আশ্রয় পাবে, তাও জানিনে। তাই আমরা কোথাও পাঠাতেও পারছিনে। মাড়োয়ারি রিলিফ সোসাইটি বসিরহাট মহকুমার দশটা আশ্রয় শিবির পরিচালনা করেছেন। রবিবার এই দশটা শিবিরে আশ্রয়প্রার্থীর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭৩ জন। ওঁরা যা হিসেব দিলেন তাতে জানা গেল, হাসনাবাদ শিবিরে ৩৫ হাজার, টাকি সৈন্যের বাগানে ৩০ হাজার, গোলপুকুরে ২৫ হাজার, বসিরহাট মেলাখোলায় ১৫ হাজার, মৈত্র বাগানে ৩৫ হাজার, মোগলপাড়ায় ১৫ হাজার, স্বরূপনগরে ৫০ হাজার, নির্মানে ১৬ হাজার, তেতুলিয়ায় ১০ হাজার, কাটিয়াহাটে ১৫ হাজার। একুনে আড়াই লক্ষ। এর উপর আরও ৩৮ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর ভার এদের নিতে হয়েছে সরকারের অনুরোধে। ওঁরা জানালেন, ওঁদের উপর এত চাপ পড়েছে যে, ওদের ব্যবস্থা চাপের চোটে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হযেছে। ওরা বেশ চিন্তিত। মড়োয়ারি রিলিফ সোসাইটি কয়েকটা নির্ধারিত কেন্দ্র থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে সরকারী বরাদ্ধ অনুসারে রেশন বিলি করেন। সরকারের বরাদ্দ দৈনিক মাথাপিছু ৪০০ গ্রাম চাল, ১০০ গ্রাম ডাল, ১৫০ গ্রাম আলু, ১৫০ গ্রাম পিয়াজ, ১৫০ গ্রাম লবণ। আশ্রয়প্রার্থীদের সপ্তাহে ছয় দিনের রেশন দেওয়া হয়। বিতরণের সুবিধার জন্য সোসাইটি নিয়ম করেছেন সপ্তাহে একদিন নির্দিষ্ট এলাকার আশ্রয়প্রার্থীর মধ্যে রেশন দেওয়া হবে। এতে বিশৃঙ্খলা কমেছে কিন্তু মানুষের দুর্দশা কমানো যায়নি। টাকির এক রেশন বিতরণ