পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩৩৪। মুক্তির দূত মুক্তিফৌজ কালান্তর ১৭ জুন, ১৯৭১ মুক্তির দূত মুক্তিফৌজ বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী ভারতে এসেছেন, আজও আসছেন। তারা পীড়িত, আর্ত, অসহায়, আশ্রয়প্রার্থী। অতিশয় স্পষ্ট ও অত্যান্ত প্রকাশ্য এই ঘটনা, ফলে সাদা চোখেই মানুষ তা দেখেন। কিন্তু সাধারণের দৃষ্টির অগোচরে বাংলাদেশের যৌবন। বিভিন্ন শিক্ষা-শিবিরে স্বদেশের পীড়া, দুঃসময় ও অসহায়তার সঙ্গে মোকাবিলার জন্য যে মুক্তিফৌজের অঙ্কুরের মধ্যে জমেছে এবং ইয়াহিয়ার ফৌজের সঙ্গে লড়াই করে ঐ অন্ধুর যে চাড়াগাছ হয়ে উঠেছে, তা কজনে দেখেছেন? এই পত্রিকার বুধবারের সংখ্যায় কমিউনিষ্ট নেতা শ্রী বর্ধনের দেখা ঐ রূপ কয়েকটি শিবিরের বর্ণনা রয়েছে। হিন্দু ও মুসলমান ছেলেরা একত্রে হাতেনাতে লড়াই-এর শিক্ষা নিচ্ছেণ । শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে ১৩ বছরের কিশোর। শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন ফৌজী ক্রিয়াকর্মে অভিজ্ঞ ৫০ বছরের প্রৌঢ় শত্রকে ঘায়েল করার বহু সাফল্যে মুক্তিফৌজের রেকর্ডও তাৎপর্যপূর্ণ। এই মুক্তিফৌজই হল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভারতে আগত অসহায় শরণার্থী এবং বাংলাদেশের ভিতরেও অসহায় কোটি কোটি মানুষের মধ্যে যোগসূত্র হলে এই মুক্তিফৌজ। ভারতে আগত ছিন্নমূল যারা, শুধু তারাই ছিন্নমূল নন; বাংলাদেশের ভিতর যারা আছেন তাঁরাও ছিন্নমূল। বাংলাদেশের ভিতরে কোন একটি কল কিংবা কারখানায় আজ ধোঁয় ওড়ে না। ৪০ লক্ষ শ্রমিক একটানা ধর্মঘটে লিপ্ত। সেখানেও সমাজের চাকা স্তব্ধ। ংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের, তারা ভারতে রয়েছেন কিংবা বাংলাদেশে আছেন, সকলেই পুনর্বাসন চাই। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সমাজ ও সভ্যতাকেই ইয়াহিয়া খাঁ চুরমার করেছে। তাদের এক সপ্তমাংশ যদি ভারতে উৎক্ষিপ্ত, তবে ছয়-সপ্তমাংশ বাংলাদেশেই আছেন। মুক্তিফৌজ হল কারিগর, যারা এই ভাঙ্গা মানুষকে জোড়া দেবে, ভাঙ্গা দেশকে পুনরায় গড়বে। ংলদেশের মুক্তিবাহিনীর এই খবরই বিশ্ব বিবেককে চাঙ্গা করে তুলছে এবং তুলবে। পাঁচটি আরব রাজ্যের যুবসংস্থাগুলির একটি যৌথ ঘোষণা হল তারাই চিহ্ন। ইস্রায়েলের দসু্য আক্রমণে প্যালেস্টাইনের ছিন্নমূল শরণার্থীদের জন্য বিশ্ব সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের সাহায্যের মানে যারা বোঝেন, কতদিন তারা বাংলাদেশের ছিন্নমূলদের প্রতি নিজেদের আন্তর্জাতিক দায়িত্বের কথা ভুলে থাকতে পারেন? বয়োবৃদ্ধ রাজনীতিক ও রাষ্ট্রনীতিকদের দৃষ্টির ঘোর কাটার জন্য কিছু বেশী সময় লাগতে পারে। কিন্তু আরব দেশগুলির যুব সংস্থাগুলির যৌথ ঘোষণাই হল প্রমাণ যে, অঙ্কুর ওখানেও ডালপাড়া মেলতে শুরু করেছে। ভারতে আগন্তুক শরণার্থীদের কাছে, বিশেষ করে শরণার্থী শিবিরের যুবকদের কাছে আজ মাত্র একটি ডাকতোমরা মুক্তিফৌজে যোগ দাও। স্বদেশের মুক্তির জন্য তোমাদের সংগ্রাম বিশ্ব মানবতাকে তোমাদের পাশে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে এবং দেবে। তোমাদের সংগ্রামই বাংলাদেশ থেকে ভারতে আগমনকারী ছিন্নমূলদের যেমন একমাত্র ভরসা, তেমনই বাংলাদেশের ভিতরে অবস্থানকারী ছিন্নমূলদেরও পুনর্বাসন ও পুনজীবনের একমাত্র সহায়। বাংলাদেশের মুক্তি অর্জন এবং স্বাধীনতাই হল একমাত্র ধ্রুব লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করার জন্যে এ দেশেরও কোন কোন দল ও ব্যাক্তি, যারা ভারতেই শরণার্থীদরে পুনর্বাসন চাই বলে প্রচার করছে, তারা জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে ইয়াহিয়ার চর।