পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

824 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড যদি নিয়মশৃঙ্খলার আওতায় আনা যায় তবে তার প্রভাবে সমগ্র শরণার্থী স্রোতই নিয়ন্ত্রিত হবে। এই তরুণেরা শরণার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থের দিকে লক্ষ্য রাখবেন। অতএব, সর্বাগ্রে বাংলাদেশ থেকে আগত যুবশক্তিকে পূর্ণত শৃঙ্খলাবদ্ধ করার মধ্যেই রয়েছে এই বিপর্যস্ত পরিস্থিতিকে সুনিয়ন্ত্রিত করার চাবিকাঠি। প্রত্যেক কর্মী ও সংগঠককে ট্রেনিং দিয়ে শরণার্থী যুবশক্তিকে সুসংগঠিত করা ও সুনিপুণভাবে যুবশিবিরগুলি পরিচালনা করা নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত কঠিন কাজ। তবে অজস্র কর্মী পাওয়া সম্ভব। বহু শিক্ষিত ব্যক্তি, নানাবিধ কাজে যুক্ত মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ, যথা, অধ্যাপক, শিক্ষক, আইন ব্যবসায়ী, সাহিত্যিক, ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়াররা আজ বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম বাংলায় আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। তাদের সকলকে এই উদ্দেশ্যে সঙ্ঘবদ্ধ করা প্রয়োজন। চাকুরীর সন্ধানে, আশ্রয়ের সন্ধানে, উদ্দেশ্যহীনভাবে বৃথা ঘুরে তাঁদের লাভ নেই। স্বদেশীয় মানুষ ও যুবকদের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে আদেশ জারি করা উচিত। আমরা আশা রাখি যে, যদি জাতীয় স্বার্থে একটি বিরাট ফলশ্রুতিপূর্ণ পরিকল্পনার আয়ত্তে এদের নিয়ে আসা যায় তাহলে এদের অধিকাংশই জীবনের বিভ্রান্ত লক্ষ্যকে পুনরায় ফিররে পাবেন। ইতিহাস, জনস্বাস্থ্য, ভূগোল, অক্ষর পরিচয়, ব্যবস্থাপনা, রাজনীতিজ্ঞান, সহায়হীন শরণার্থী সেবায় আত্মনিয়োগ সমস্তই এই পরিকল্পনার বিষয়ীভূত হবে। যদি টেকনিক্যাল ট্রেনিংয়ের জন্য যথেষ্ট লোক না পাওয়া যায় তাহলে ভারতীয়দের মধ্যে থেকে কর্মী সংগ্রহ করে শূণ্যস্থান পূর্ণ করা যাবে। এটা স্বাভাবিক যে মুসলমান শরণার্থীদের চেয়ে হিন্দু শরণার্থীরা সংখ্যায় বেশী হবেন। এই হিন্দু শরণার্থীদের মনোবলই সবচেয়ে বেশী বিধ্বস্ত দেখা যাবে এবং বেশির ভাগ হিন্দু যুবকেরা বাংলাদেশে আর ফিরে যাবার ইচ্ছা পোষণ করবে না। কিন্তু যদি বাংলাদেশ এবং ভারতের সর্বস্তরের নেতারা একযোগে এদের মধ্যে ব্যাপক, গভীর এবং সুশৃঙ্খলভাবে রাজনৈতিক কাজ করে যান তাহলে বাংলাদেশের প্রতি তাদের আস্থা ও বিশ্বাস আবার ফিরে আসবে। শরণার্থীদের মধ্যে বহু হিন্দু তরুণ সবকিছু সত্ত্বেও এখনো মুক্তি সংগ্রামে যোগ দিতে ইচ্ছুক। ট্রেনিং, অস্ত্রশস্ত্র, পরিকল্পনা ইত্যাদি সহযোগে এদের সুশিক্ষিত করে তুললে বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক চক্রকে সার্বিভাবে প্রত্যাঘাত করার মুহুর্তে এঁরা এগিয়ে যাবেন। এ কাজে প্রচুর টাকা দরকার এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু শরণার্থীদের ভরণপোষণের জন্য টাকা আমাদের জোগাড় করতেই হবে। বিক্ষিপ্ত বা আধাখেচড়াভাবে নয়, এত বড় একটা যুবশক্তিকে প্রকৃত টেনিং দিতে হলে যে আরো কিছু বেশি টাকা দরকার তা সত্য। কিন্তু এই অর্থব্যয় পরিণামে উভয়ত লাভজনক হবে। শরণার্থীদের ব্যাবস্থাপনা এবং বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামের জন্যে এক বিরাট শক্তিকে গড়ে তোলা দুটি কাজই এতে সার্থক হবে। তবে পরিচ্ছন্ন শৌচাগার, পানীয়জল, পোষাক-পরিচ্ছদ, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, গ্রন্থাগার, চিকিৎসা ব্যবস্থা এই সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া যুব-শিবিরগুলির কাজ আরম্ভ করা ঠিক নয় । যাতে অতি প্রয়োজনীয় সাধারণ জিনিসগুলোর অভাবে তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও বিরক্তি দেখা না দেয় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতেই হবে। যদি ভারত আজ এ দায়িত্ব যোগ্যভাবে গ্রহণ ও পালন করতে পারে তবে একদিন স্বাধীন বাংলাদেশ এজন্য ভারতকে আন্তরিক প্রীতি ও সৌহার্দ্য জ্ঞাপন করবে- আর অদূরভবিষ্যতে বাংলাদেশকে পুনর্গঠিত করার কাজে স্বাধীন বাঙালিরা এই লক্ষ লক্ষ সুশিক্ষত সুনিয়ন্ত্রিত যুবকদের নিয়োগ করতে পারবেন। আজ যা অসহনীয় বোঝা মনে হচ্ছে, ভবিষ্যতে তা-ই এক বিশাল সজীব সোনার খনি বলে পরিগণিত হবে। চূড়ান্ত দুঃখজনক পরিস্থিতিকেও পরম মঙ্গলের প্রতি পরিচালিত করার এটাই একমাত্র পথ। কিন্তু কে এই বিরাট পরিকল্পনার দায়িত্ব নেবেন এবং তা কার্যকরী করবেন? আজ অত্যান্ত তীক্ষ্ম এবং দ্ব্যর্থহীন পদ্ধতিতে প্রত্যেকের দায়িত্ব প্রত্যেকের সামনে পরিস্কারভাবে তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি, এবং ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের সামরিক কর্মচারীদের নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাশালী সংস্থা গঠন