পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খণ্ড
right

 পরিবেশিত। এর মধ্যে আছে কিছু পরিচিত রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত। অন্যান্য গীত-রচয়িতার মধ্যে আছেন: গুরুসদয় দত্ত, সলিল চৌধুরী, সিকান্দার আবু জাফর, নাজিম মাহমুদ, সারওয়ার জাহান। গানগুলি শৃংখলার সঙ্গে উপস্থাপিত; কখনও একক কণ্ঠে; কখনও সম্মেলকভাবে। সম্মেলক গীতাংশই বেশি। বত্রিশ জন কণ্ঠশিল্পী এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন; যন্ত্রসংগীতে ছিলেন দশজন। এই বাংলাদেশের ওই শিল্পীরা যে একটি দলে পরিণত, তার নির্ভুল প্রমাণ পাওয়া গেল এই ‘রূপান্তরের গান' অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সনজিদা খাতুন ও ওয়াহিদুল হক।

 শ্রী দেবব্রত বিশ্বাস এই দিন আমাদের তিনটি রবীন্দ্র সংগীত শুনিয়েছিলেন: ‘কে এসে যায়’, ‘রুদ্রবেশে কেমন খেলা’, ‘কে দিল আমায় আঘাত’। দরদ দিয়ে গাওয়া তিনটি গানই চমৎকার। কিন্তু মনে হয়, তাঁর গান রবিবারের আসরের জন্য রাখলেই ভাল হত, কারণ ওই আসরটি ছিল এই বাংলার শিল্পীদের জন্য চিহ্নিত।

 রবিবার সকাল ন'টায় দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু। আগের দিন রাত্র সাড়ে ন'টায় প্রথম অধিবেশন সমাপ্ত হয়। ইতিমধ্যে, বলা বাহুল্য, রবীন্দ্র সদন আর কোনও গোষ্ঠীর দখলে আসেনি। উদ্যোক্তাদের কারও কারও বেশবাসে সামান্য কিছু পরিবর্তন চোখে পড়লেও মনে হল, সমিতির অনুষ্ঠান একটানা চলছে। বিচিত্রানুষ্ঠানের এই আসরের শিল্পীরা সকলেই সুখ্যাত এবং জনপ্রিয়, আবহাওয়াও ছিল অনুকূল, প্রেক্ষাগৃহ তাই ভরে উঠতে দেরী হয়নি।

 রবীন্দ্র-সংগীত আর মাঝে মাঝে আবৃত্তির বৈচিত্র্য-এইভাবে পুরো তিন ঘণ্টা কেমন করে কেটে গেল আমরা জানতেও পারলাম না। শ্রীমতি তৃপ্তি মিত্র ও শ্রী শান্তিদেব ঘোষ রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করলেন; শ্রী শম্ভু মিত্র শোনালেন জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের ‘মধুবংশীর গলি’; শ্রীমতি অপর্ণা সেন ইরানের কবি নাজিম হিকমতের একটি কবিতার বাংলা রূপান্তর (সুভাষ মুখোপাধ্যায়-কৃত), শ্রীদেব দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের কবিদের রচনা। ‘ব্লাড ব্যাংক’ কবিতার (এটি আগেও একবার শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় শুনিয়েছিলেন) ‘মাটি অভিমুখে রক্তের চিত্রকল্পটি কি আমাদের রক্ত মুহূর্তের জন্য হিম করে দিয়েছিল, মনে করিয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশের কোনও ডকুমেণ্টারি ছবির কথা।

 রবীন্দ্র-সংগীত শুনলাম প্রায় কুড়িখানি। পূজা, দেশপ্রেম, প্রেম, আত্মনিবেদন এবং একান্ত কিছু অনুভুতির গান। মনে হয়, বেশির ভাগ শিল্পীদের স্বনির্বাচিত। বিচিত্র অনুষ্ঠান যখন, তখন বিষয় বৈচিত্র্যই কাম্য। শুরু করলেন সুচিত্রা মিত্র, শেষ একক শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। মাঝে ছিলেন শান্তিদেব ঘোষ, নীলিমা সেন, অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাগর সেন। প্রত্যেকেই তিনটি করে গান গেয়েছিলেন, পরম আন্তরিকতার সঙ্গে। বিশেষ করে ভাল লাগল: ‘না বাঁচাবে আমায় যদি' (সূচিত্রা মিত্র), 'মম মন-উপবনে’ (শান্তিদেব ঘোষ), আজ যেমন করে গাইছে আকাশ' (নীলিমা সেন), ‘একবার তোরা মা বলিয়া ডাক’ (অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়), 'তোমারি তরে মা সঁপিনু এ দেহ’ (কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়)।

 দুই বাংলার অর্ধশতাধিক শিল্পীর গান আমরা শুনলাম দুই আসরে। গানের সংখ্যাও অর্ধশতাধিক। তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের গান অন্তত ত্রিশ। তিনিই যে নব বাংলাদেশের প্রাণপুরুষ।

-সংগীতপ্রিয়।