পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

936 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমায় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানীদের তুমুল লড়াই চলছে। ময়মনসিংহ সেক্টরের মিয়াবাজারে ৩১ নম্বর বালুচ ও ৭১ নম্বর উইং রেঞ্জার্সের ১৬০ জন লোক তাদের অস্ত্রশস্ত্র সহ আত্মসমর্পণ করেছে। শ্রীহট্ট সেকটরের মুন্সিবাজার ভারতীয় বাহিনী দখল করেছে। মুন্সীবাজারে ৩০ জন পাকিস্তানী সৈনিককে বন্দী করা হয়েছে। ভারতীয় বাহিনী পশ্চিমে হাতিকান্দা ও পুবে নাগেশ্বরী থেকে রংপুরের গুরুত্বপূর্ণ রেল জংশন লালমণির হাটের দিকে অভিযান করেছে। হিলি সেকটরে পাকিস্তানী সৈন্যরা চারখাই, ফুলবাড়ী দখল করে পার্বতীপুরের রেল জংশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নৌবাহিনীর সাফল্য ভারতীয় নৌবাহিনীর গোলায় চট্টগ্রামের তৈল শোধণাগারের ক্ষতি হয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা দপ্তর চট্টগ্রাম বন্দরের ধারে কাছে নিরপেক্ষ জাহাজগুলিকে না যাবার নির্দেশ দিয়েছেন। বিমান বাহিনীর কৃতিত্ব শিলং-এ ভারতীয় বিমান বাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছে যে, বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিগুলির উপর ভারতীয় বিমানগুলি ২৩০ বার আক্রমণ চালিয়ে বিপুল ক্ষতি করেছে। বাংলাদেশে কোন ভারতীয় বিমানের ক্ষতি হয়নি। সবগুলি বিমান নিরাপদে ঘাঁটিতে ফিরে এসেছে। তিনি বলেন যে, ভারতীয় বিমানগুলি ঢাকা শিল্পাঞ্চলে ও বিমান ঘাঁটির রানওয়েতে ৩৪ বার বোমা ও গুলী মেরে ক্ষতি করেছে। কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টের বিমান ঘাঁটি ও তেজগাঁও বিমান ঘাঁটিতে আজ পাকিস্তানীদের কোন বিমান ওঠানাম করতে পারেনি। কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটিতে ভারতীয় বিমানের গোলা দশ ফুট গভীর ও ৩০ বর্গ ফুট পরিমিত এলাকায় গর্ত করেছে। গতকালের হানায় ১৪টি পাকিস্তানী বিমান ধ্বংস হয়েছে। ভারতের ৫টি বিমানের ক্ষতি হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর সাফল্য মুক্তিবাহিনী ঢাকা থেকে ৩১ কিলোমিটার উত্তরের রেল জংশন টঙ্গ দখল করেছে। ফলে ঢাকা ও ভৈরববাজারের মধ্যে রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ঢাকার উত্তর-পশ্চিমে মনোহরদি ও নরসিংদি থানাগুলি মুক্তিবাহিনী দখলে এনেছেন। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের পুরা মহকুমায় মুক্তি বাহিনী আধিপত্য বিস্তার করেছে। এর ফলে ঢাকার পশ্চিম পাকিস্তানীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের রণাঙ্গন থেকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা রাওয়ালপিন্ডিতে এই এস-ও-এস পাঠাচ্ছে যে তাদের অস্ত্র ও গোলা বারুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সমরসম্ভার পাঠানো হোক। কিন্তু বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানীদের কাছে যাতে কোন রসদ না পৌছায় সেজন্য ভারত আকাশ ও নৌপথে অবরোধ ব্যুহ রচনা করেছে। বাংলাদেশে পাক বাহিনী বিচ্ছিন্ন (দিল্লী অফিস) ৫ই ডিসেম্বর- বাংলাদেশে পাক বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ছে। ক্রমশ, জল আর স্থলপথে পশ্চিমের সঙ্গে এখন আর এদের কোন যোগাযোগ নেই। এরা এখন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এখন এদের চাঙ্গা করে তোলার জন্য ইসলামাবাদে তৈরী নানা কাহিনী শোনানো হচ্ছে। এদের বলা হচ্ছে অমৃতসর, পুঞ্চ, ছাম্ব আর ফিরোজপুর এখন পাকিস্তানের দখলে। অতএব মুজাহিদের দল ভয় পেওনা, জেগে ওঠো