পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

941 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড কুমিল্লা -ফেনী খন্ডে ৭০০ জন পাক সৈন্য নিহত হয়েছে। শ্রীহট্টের কয়েকটি থানা এলাকা মুক্তিবাহিনী দখল করেছে এবং সেখানে বাংলাদেশ সরকার চালু হয়েছে। ৩রা ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী যখন চট্টগ্রাম আক্রমণ করে তখন স্থানীয় অধিবাসীরা ‘জয় বাংলা ও বিভিন্ন ধ্বনি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের নাট্যরূপ লেখককে মুক্তিবাহিনী গুলি করে খতম করেছে। আগরতলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল আখাউড়াতে আজ এক বিরাট সমাবেশের মাঝে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। মুক্তিপরিষদের সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতায় অসামরিক প্রশাসন দেখার জন্য ঐ এলাকায় প্রশাসনিক কাঠামো স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের মুক্তি পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রী জহুর আহমদ চৌধুরী পতাকা উত্তোলন করে বলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় স্থানাস্তরিত করার দিন আর দূরে নেই। বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্যদানের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধীর, তাঁর সরকার ও ভারতের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ই বি আর-এর বিশেষ ভূমিকা কলকাতায় ইষ্টাৰ্ণ কম্যান্ডের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, লাকসাম সেক্টটরে ভারতীয় বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সাবেক ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের লোকেরা সাহায্য করেছে এবং ফেণী দখলে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। হিলির উত্তর পশ্চিমে রংপুরের হাতীবান্দা ভারতীয় বাহিনী দখল করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে সুলতানপুরে ভারতীয় বাহিনী এক কোম্পানী ইঞ্জিনিয়ার, ৭টি গাড়ী ও সামরিক সাজসরঞ্জাম, আটক করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া দখলের পর ভারতীয় বাহিনীকে ভৈরববাজারের দিকে রওনা হতে হবে। ভৈরববাজার ঢাকার উত্তরে টঙ্গি যাবার পথে। প্রত্যক্ষদশীর বিবরণ ঢাকা, ৬ই ডিসেম্বর- ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমানগুলি পশ্চিম দিক থেকে আঘাত হেনে আজ ঢাকা শহরকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর মিগ ২১ ওয়াই এবং সুহই-৭ এস গত শনিবার ভোরে শহরের ওপর বোমা বর্ষণ শুরু করে এবং আধ ঘণ্টা পর বিকেল পর্যন্ত বোমা বর্ষণ চলে। পরে রাতের অন্ধকারে আবার শুরু হয়। প্রত্যক্ষদশীদের বিবরণীতে প্রকাশ, বিমান হানার ফলে সম্ভবতঃ ১২ জন পাকিস্তানী মারা গেছে। ভারতের দুটি বিমান খোয়া গেছে। উইং কম্যান্ডার বলে চিহ্নিত জনৈক বিমান চালককে বন্দী করা হয়েছে। বিমানগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিমান বন্দর। পূর্বাঞ্চলে এখানেই পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের ইহাই একমাত্র প্রাণকেন্দ্র। রাষ্ট্রসংঘ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা এবং বিভিন্ন দূতাবাসের ইউরোপীয়দের পরিবারবর্গকে ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সেখানে দেশ ত্যাগের অপেক্ষায় আছে।